স্বাস্হ্য ডেস্ক:-
নিয়মিত ঘুম হচ্ছে না এমন সমস্যায় হয়তো অনেকেই ভুগছেন। কিন্তু এই ঘুম না হওয়ার কারণ কিন্তু স্বয়ং আপনিই। আমাদের বেশ কিছু অভ্যাসই নিয়মিত ঘুম না হওয়ার জন্য দায়ী। দেখে নেওয়া যাক এবং তার কিছু সমাধান।
১। কৃত্রিম আলো: ঘুমোতে যাওয়ার সময় ঘরের মধ্যে আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন! তাহলে কিন্তু আর ঘুম ধরা দিতে চাইবে না। ‘মেলাটোনিন’ নামে একটি বিশেষ হরমোন আপনার ঘুমের অনুভূতি জাগায়। কিন্তু এই হালকা আলোর কারণে আপনার শরীরে মেলাটোনিনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘুম আসে না।তাহলে উপায়? খুব সহজ। সব ক’টা বাতি নিভিয়ে ফেলুন আর হারিয়ে যান ঘুমের রাজ্যে।
২। ক্যাফেইন সেবন: ক্যাফেইনের প্রতি আসক্তি ঘুমের জন্য বেশ ক্ষতিকর। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি এক কাপ ক্যাফেইন যুক্ত কিছু পান করে থাকেন তবে তো কথাই নেই। ক্যাফেইনের নেশা বেশ প্রবল, থাকেও দীর্ঘক্ষণ। বিকেল চারটা নাগাদ এক কাপ কফি পান করা মানে আপনি রাত দশটা পর্যন্ত শরীরে ক্যাফেইন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই হিসেব করে কফি খান। নিয়মত ঘুমান।
৩। দিনের ঘুম: দিনের বেলায় ‘ভাত-ঘুম’ দেয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। কিন্তু এই ঘুম যদি ২০ মিনিটের বদলে পাক্কা দেড় ঘণ্টা হয়ে যায় তাহলে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত তো হবেই। তাই দিনের বেলা দীর্ঘ সময় ঘুম নয়।
৪। ব্যায়াম: আপনি কি মিনিট ত্রিশের মতো ব্যায়াম করেই হাঁপিয়ে ওঠেন? তাহলে তো ব্যায়াম আপনার জন্য নয়। ব্যায়ামের কাজ হল আপনাকে এনার্জি এনে দেওয়া, ক্লান্তি নয়। বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে নয় বরং ঘুম থেকে উঠে ব্যায়ামে যান আর পূর্ণ উদ্যোমে শুরু করুন দিন।
৫। ঘরের তাপমাত্রা: যে ঘরটিতে আপনি ঘুমাচ্ছেন সেটিও কিন্তু ঘুম আনার জন্য গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়। আরামদায়ক আর পরিপাটি ঘর হলে ঘুম এমনিই এসে যাবে। ঘরের তাপমাত্রাটাও কিন্তু বেশ গুরুত্বপুর্ণ এ ক্ষেত্রে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে ঘুম এলেও কিন্তু কিছুক্ষণ পর তা ভেঙে যাবে।
৬। দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া: দেরি করে ঘুমাতে গেলে ভালো ঘুমের আশা করা বৃথা। কথায় আছে না, ‘আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ’। কোন বিশেষ কাজ ছাড়া অনেক রাত পর্যন্ত দেরি না করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান, ভালো ঘুম হবে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
৭। শব্দহীন পরিবেশ: ঘুমের জন্য শব্দহীন পরিবেশ নিশ্চিত করুন। আপনার প্রতিবেশীর বাড়ির পার্টির শব্দ থেকে নিজেকে সামলাতে কানে এয়ারপ্লাগ বা তুলা লাগিয়ে ঘুমান।
৮। মুঠোফোন দূরে রাখা: ভালো ঘুমের জন্য নিজেকে গুছিয়ে নেয়াটা বেশ জরুরী। হয়তো আপনার মুঠোফোনটি বালিশের পাশে নিয়ে ঘুমোতে গেছেন। একটু পর পর জেগে উঠে মেইল আর ফেইসবুক চেক করছেন । এমন হলে আপনার মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদনে কিন্তু বিঘ্ন ঘটবে। তাই সাবধান। সব কিছু ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে যান।
৯। এলার্ম ঘড়ি: প্রতি দশ মিনিট অন্তর অন্তর হয়তো ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রেখেছেন। এটা কিন্তু আপনাকে ঘুমাতে দিবে না একদম। আসলে আপনার শরীর জানে তার কতটুকু ঘুম প্রয়োজন কিংবা আপনাকে কখন জাগতে হবে! তাই এলার্মের সুইচ অপশন বন্ধ রাখুন।
১০। ঘুমানোর আগে শর্করা: ঘুমাতে যাওয়ার আগে শর্করা জাতীয় খাবার খেলে আপনার রক্তের ‘সুগার’ বাড়িয়ে দেয়, ফলে ঘুমে ব্যাঘাত হবে। তারচেয়ে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার খান এবং রাতে নির্বিঘ্নে ঘুমান।
১১। অ্যালকোহল পান: এলকোহল পান করলে ভালো ঘুম হয় এমন একটি ভুল ধারণা আমাদের অনেকেরই আছে। কিন্তু অ্যালকোহল কখনোই আপনার ভালো ঘুম এনে দেবে না। একটা ঘুম ঘুম ভাব চলে আসবে বটে কিন্তু এর বেশি কিছু নয়। অ্যালকোহল পানের ফলে আপনি রাতে বেশ কিছু বার জেগে উঠবেন। ফলে ভালো ঘুম হবে না। তারচেয়ে বরং ঘুমের সমস্যা দেখা দিলে অ্যালকোহল ত্যাগ করুন।