- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-৩০
- ৭৪৫ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার পাশাপাশি ভারত ও জাপানের কাছ থেকে ‘বড় ধরনের’ ভূমিকা পালনের আশা করছে বাংলাদেশ।
চীনের প্রকাশ্যেই মিয়ানমারের পক্ষ নেয়া আর ভারতের দোদুল্যমান অবস্থানের মধ্যেই এই প্রত্যাশার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি গুস্তাবো আদোলফো মেসা কুয়াদ্রা ভেলাসকাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধদলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
জবাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে বাংলাতদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
আগের দিন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। সেখানে রোহিঙ্গাদের মুখে তাদের দুর্দশার কথা শুনে কেঁদে ফেলে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার অঙ্গীকারও করে তারা।
৮০ দশক থেকেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে বারবার তাড়িয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে দেশটি। গত আগস্টে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ লাখ।
এদেরকে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সই হয়েছে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি চুক্তি। কিন্তু মিয়ানমার নানা অযুহাতে টালবাহানা চালিয়েই যাচ্ছে। ফলে জানুয়ারিতে প্রত্যাবাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি কবে শুরু হবে, সেটি এখনও অনিশ্চিত।
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর চীন প্রকাশ্যেই মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ বিষয়ে জাতিসংঘে তোলা বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় বিশ্বের এই পরাশক্তি। আর ভারত কারও পক্ষে অবস্থান না দিয়ে দুই শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলছে। জাতিসংঘে তারা বাংলাদেশের পক্ষেও ভোট দেয়নি, বিপক্ষেও দেয়নি। তারা ভোটদানে ছিল বিরত। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মিত্র রাশিয়ার কাছ থেকেও প্রত্যাশিত ভূমিকা পায়নি ঢাকা।
এর মধ্যেও চীন ও ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক সব আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব দেশের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের জোরাল ভূমিকাও চাইছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘জাতিসংঘের তত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে।’
নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার কথাও ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যে চুক্তি করেছে সে অনুযায়ী মিয়ানমারের কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর এবং মিয়ারমানের সমাজ কল্যাণমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার সময় আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে নিবন্ধন করার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের চাপে কক্সবাজারে স্থানীয়রা ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং পরিবেশ ও বনভূমিরও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
আসন্ন আসছে বর্ষায় রোহিঙ্গাদেরও দুর্দশা বাড়ার আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে ভাষানচরে তাদের পূর্নবাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেলি কারি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে মানবিক দিক থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নতুন একটি মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে জানান নিরাপত্তা পরিষদের দলে দেশটির প্রতিনিধি য়ু হাইতাও।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশকে সমর্থন সম্প্রসারণের আশ্বাস দেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ সংঘাত চায় না এবং এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রমূখ।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..