×
ব্রেকিং নিউজ :
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের আমরা যেন ভুলে না যাই : নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে : জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার হবিগঞ্জে মা-মেয়ে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড ওএমএস-এর আওতায় ৪৫ পয়েন্টে ভর্তুকি মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি হচ্ছে ‘অপশক্তির দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়’ আমিরাতের শীর্ষ কোম্পানিসমূহ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী : রাষ্ট্রদূত ভারত ঐতিহ্যগত ওষুধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে জ্ঞান বিনিময়ে আগ্রহী নদী বাঁচাতে আবরার ফাহাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পথ নির্দেশ করবে : নাহিদ ইসলাম দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের পদত্যাগ
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-০৯
  • ৫৬৬৫৪৫১৮ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
ইসলামি বর্ষপঞ্জি মতে, মহররম মাস হলো আরবি সনের প্রথম মাস। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে চারটি মাস সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও সম্মানিত। আর তা স্বয়ং আল্লাহই ঘোষণা করেছেন। ‘আল্লাহতায়ালা আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই মাসের সংখ্যাবার নির্ধারণ করে রেখেছেন। তন্মধ্যে চারটি মাস বেশি সম্মানিত। সুতরাং, তোমরা এ সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে (ঝগড়াবিবাদ ও খুনাখুনি) করে নিজেদের ওপর জুলুম করো না।’ ‘মহররম’ আয়াতে বর্ণিত চারটি মাসের মধ্যে অন্যতম। অন্য তিনটি হলো-জিলকদ, জিলহজ ও রজব। মহররম মাসের সম্মানের ব্যাপারে প্রিয়নবি (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ’র মাস মহররমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। কেননা, যে ব্যক্তি মহররমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত দান করে সম্মানিত করবেন আল্লাহতায়ালা।’ (মুসলিম, ইবনে মাজা)। ফরমানে মুস্তফা (সা.) হচ্ছে, ‘রমজানের রোজার পরই আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)।
মহররম মাসের রোজা হলো ইয়াওমুল আশুরা তথা মহররমের দশ তারিখের রোজা। তবে যেহেতু ইয়াহুদিরা দশ তারিখ রোজা রাখে, সেজন্য প্রিয়নবি (সা.) দশ তারিখের রোজার সঙ্গে মিলিয়ে আরও একটি অর্থাৎ ৯ ও ১০ তারিখ দুটি রোজা রাখার জন্য বলেছেন। নিঃসন্দেহে এ রোজা অনেক ফজিলতপূর্ণ, যা একাধিক হাদিস ও আউলিয়ায়ে কেরামদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। এ মাস যেহেতু সম্মানিত মাস, তাই এ মাসে সামর্থ্য অনুযায়ী, দান-খয়রাত, নফল নামাজ, রোজা, কুরআন তেলাওয়াত, মিলাদ-কিয়াম, মাহফিল ইত্যাদি আমল করা যেতে পারে।
মহররম মাসের ১০ তারিখকে ইয়াওমুল আশুরা বলা হয়। ইয়াওমুল আশুরা বিশ্ব ইতিহাসের অতীব তাৎপর্যমণ্ডিত একটি দিন। এ দিনেই সৃষ্টি হয়েছিল এ মহাবিশ্ব এবং এর ধ্বংসও হবে এ দিনেই। এ দিনেই হজরত আদম (আ.) ধন্য হয়েছিলেন মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভে। হজরত নূহ (আ.) মহাপ্লাবন থেকে, হজরত আইয়ুব (আ.) তার কঠিন রোগ থেকে, হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে, হজরত ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে, হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে, হজরত ইউসুফ (আ.) মৃত্যুকূপ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে ছিলেন এ দিনেই। এমনিতর অসংখ্য ঘটনায় সমুজ্জ্বল এ ইয়াওমুল আশুরা। তবে এ দিনটি বিশ্ববাসীর কাছে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ যে কারণে, সেটি হলো-এ দিনেই সংঘটিত হয়েছিল বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক কারবালা যুদ্ধ। সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এখানে সপরিবারে শাহাদতবরণ করেছিলেন মহান আল্লাহর প্রিয় হাবিব, সব শ্রীমান ব্যক্তিদের মহাসম্রাট, নবিকুলের সরদার, উভয় জগতের সুলতান নবি মুস্তফা (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, মা ফাতেমার (রা.) কলিজার টুকরা হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)।

অন্যায়-অসত্যের ব্যাপারে আপসহীন ইমাম হোসাইন (রা.) জালিম ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত-মজলুম মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে নিজ দেহের শেষ রক্ত বিন্দুটুকু পর্যন্ত বিসর্জন দিতে সামান্যতম কুণ্ঠাবোধ করেননি। আর এ ত্যাগ ও শাহাদতের মধ্য দিয়েই তিনি হয়ে উঠেছেন সত্য ও ন্যায়ের জ্বলন্ত প্রতীক। জগদ্বাসীর কাছে তিনি হয়ে আছেন চির স্মরণীয় ও বরণীয়।

পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলামের সঠিক বার্তাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। নৈতিক, চারিত্রিক এবং মানবিক সব অসৎ গুণাবলি যাদের ছিল মজ্জাগত, তারা ইসলামি খেলাফতকে পারিবারিক উত্তরাধিকার হিসাবে ভোগ করতে গিয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শকেই কলঙ্কিত করতে বসেছিল। ইসলামের নামে এ স্বেচ্ছাচার নবি দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। উপরন্তু খেলাফতের অধিকার ছিল ইমাম হোসাইন (রা.) এর। অথচ উমাইয়া শাসক মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (রা.)-এর চুক্তি ভঙ্গ করে মুয়াবিয়াপুত্র ইয়াজিদ ক্ষমতার আসনে বসেই তার সামনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে যায়। ইমাম হোসাইন (রা.) এ সংকটকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন, যাতে বিশ্ববাসী প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পায় এবং ইসলামের প্রকৃত বার্তা ধীরেসুস্থে হলেও সবার কাছে পৌঁছে যায়। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর সেই আন্দোলনকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়। কালের অমোঘ পরিক্রমায় দেখা গেছে, ভালো এবং মন্দের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে এসেছে আদিকাল থেকে। সত্যের পক্ষে কোনো কোনো সংগ্রাম ছিল দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

আবার কোনো কোনো সংগ্রাম ছিল অত্যাচারীদের রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে অস্পষ্ট। ইমাম হোসাইন (রা.)-এর যে আন্দোলন, তা ছিল তৎকালীন শাসকদের ইসলামবিনাশী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট সংগ্রাম। যদিও সে সময়কার জনগণের কাছে অজ্ঞানতার কারণে তা ছিল রাজনৈতিক মেঘে ঢাকা সূর্যের মতো অস্পষ্ট। যার ফলে তখন ইসলাম অনুরাগীরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলাচলে ভুগেছিল; কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ ব্যাপক গবেষণা আর ইতিহাস পর্যালোচনায় প্রকৃত সত্য উদ্ভাসিত হয়ে গেছে সবার সামনে। গবেষকরা আজ ইমাম হোসাইন (রা.)-এর সেই সংগ্রামের যথার্থতা খুঁজে পেয়েছেন। এতকাল পর তার আন্দোলনের যথার্থতা খুঁজে পাওয়ার মধ্যেই অনুমিত হয়, ইমাম হোসাইন (রা.)-এর সেই আন্দোলন কত সুদূরপ্রসারী ছিল। সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আন্দোলনের মূল্যবোধগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায়। অধ্যাপক মুর্তজা মোতাহহারীর দৃষ্টিতে এসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধটি হলো তার সহজাত সত্যনিষ্ঠা ও অবিচল সততা। আসলে প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব কিছু সহজাত বৈশিষ্ট্য থাকে। ওই বৈশিষ্ট্যের আলোকেই তার জীবনের সবকিছু পরিচালিত হয়।

ইমাম হোসাইন (রা.)-এর জীবনের বৈশিষ্ট্যও ছিল এ রকম দৃঢ় সততায় সমৃদ্ধ। তার কারণ ইমাম হোসাইন (রা.)-এর জীবনের যে মূল্যবোধগুলো ছিল, সেগুলো স্বয়ং রাসূলে খোদার আদর্শ ও শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত। প্রিয়নবি (সা.)-এর শিক্ষা মানেই হলো পবিত্র কুরআনের শিক্ষা। আর কুরআনের শিক্ষা হলো অনৈসলামি বা খোদাদ্রোহী ব্যক্তির কাছে মাথানত না করা, শাহাদতকামিতা, নিজস্ব আদর্শকে সমুন্নত রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা। হোসাইনি আন্দোলনের মূল্যবোধগুলোকে বিখ্যাত গবেষক অধ্যাপক মুর্তজা মোতাহহারী দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। একটি ক্ষুদ্র, অপরটি বৃহত্তর মূল্যবোধ। এ মূল্যবোধগুলোই ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আন্দোলনকে কালজয়ী স্থায়িত্ব বা চিরন্তন ঐশ্বর্য দিয়েছে। এসব মূল্যবোধ ইমাম হোসাইনের মধ্যে যেমন ছিল, তেমনি তার সঙ্গী-সাথিদের মধ্যেও ছিল। ক্ষুদ্র মূল্যবোধগুলোর মধ্যে একটি হলো তার সুদূরপ্রসারী ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি। সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি বলতে রূপকার্থে বলা যায়, ইমাম হোসাইন (রা.)-এর একটি ইটের মধ্যেও যা স্বাভাবিকভাবেই দেখতে পেতেন, অন্যরা তা আয়নাতেও দেখতে পেতেন না।

অধ্যাপক মোতাহহারীর মতে, হোসাইনি আন্দোলনের পেছনে ছিল একটা গভীর বোধ ও উপলব্ধি। এ বোধই তার আন্দোলনকে মহান করে তুলছে। এ উপলব্ধিটা হলো উমাইয়া শাসকরা যে খেলাফতির নেপথ্যে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চালাত, তা জনগণ প্রকাশ্যে দেখতে পেত না। কিন্তু ইমাম হোসাইন (রা.)-এর দৃষ্টি প্রখরতার কারণে তিনি দেখতে পেতেন। ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদের ক্ষমতাসীন হওয়ার কথা শুনে বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করব! হে ইসলাম বিদায়! যখন উম্মতের জন্য ইয়াজিদের মতো ব্যক্তি নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়।’ ইমাম হোসাইন (রা.)-এর এ উক্তি দূরদৃষ্টিরই পরিচায়ক। কেননা, অন্যরা ইয়াজিদকে সেভাবে চিনতে পারেনি, যেভাবে চিনতে পেরেছিলেন ইমাম হোসাইন (রা.)। সমকালীন জনগণের উপলব্ধিগত দুর্বলতা, তাদের স্থূলদৃষ্টি এবং বিস্মৃতি ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ!

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat