- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-১৯
- ৭৬২ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ছয়টি ধারা নিয়ে দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল উদ্বেগ জানিয়েছে। এর মধ্যে একটি ধারায় মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অপপ্রচারে শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
সম্পাদকদের আশঙ্কা প্রস্তাবিত আইনের এসব ধারা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। তারা যেসব ধারার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন সেগুলো হলো: ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ এবং ৪৩।
এর মধ্যে ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ডিজিটাল বিন্যাসে অপপ্রচারের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা আছে।
বুধবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জাব্বার এবং প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে বৈঠক করেন সম্পাদকরা।
সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন নিউজ টুডের রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, নিউ এজের নূরুল কবির, প্রথম আলোর মতিউর রহমান, ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজাম, ইনকিলাবের এ এফ এম বাহাউদ্দিন এবং ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগান্তরের (ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক) সাইফুল আলম, সংবাদের খন্দকার মনিরুজ্জামান, বণিক বার্তার দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, কালের কণ্ঠের ইমদাদুল হক মিলন এবং নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা এ আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ এবং ৪৩ নিয়ে কনসার্ন জানিয়েছে। এগুলো নিয়ে আপত্তির চেয়েও তাদের কনসার্ন বেশি।’
গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত আইনটিতে নীতিগত অনুমোদন দেয়। এই আইনটি পাস হলে বহুল আলোচিত তথ্য প্রযুক্তি আইনটির পাশাপাশি এর সমালোচিত ৫৭ ধারাও বিলোপ হবে।
আর এই আইনের ৩২ ধারা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়। এই ধারায় রাষ্ট্রীয় গোপনীয় দলিল কপি করলে গুপ্তরচ হিসেবে সাজার কথা বলা হয়।
গত ২৫ মার্চ ১০ টি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে চারটি ধারা নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানায়। আজকের বৈঠকে এই চারটি ধারা ধারাও আরও দুটি ধারা নিয়ে আপত্তির কথা জানায় সম্পাদক পরিষদ।
এডিটরস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, এগুলো বাক-স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এটা বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা, যেটা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি, সেটা গভীরভাবে ব্যহত হবে।’
‘আমরা আশা করি, যে আইনটি প্রণয়ন হবে সেই আইনে সত্যিকার অর্থে সাইবার ক্রাইমই প্রতিহত হবে, সাংবাদিকতা কোনোরকমেই খর্ব হবে না।’
তবে এই ধরনের একটি আইন করা দরকার বলেও মনে করেন মাহফুজ আনাম। বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশে প্রয়োজন। …আইনটা হোক সুষ্ঠু আইন, প্রয়োজন অনুযায়ী। এ আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কোনোভাবেই ব্যহত করবে না, এটাই আমাদের বিশ্বাস।’
আইনমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত আইনটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। আগামী রবিবার এর একটি সভা হবে। সেদিনের পর নির্ধারিত তারিখে লিখিতভাবে স্থায়ী কমিটিকে তাদের উদ্বেগের কথা জানাবেন সম্পাদকরা।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছিল সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতা বন্ধ করার জন্য নয়। সেক্ষেত্রে এ আইনের মধ্যে যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে সেগুলো যেন অপসারণ করা যায়, সেজন্য এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির আলোচনা হবে।’
‘এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমিরা দু-পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি, তাদের যে কনসার্ন সেগুলো আমরা দূর করতে পারব।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে টেলিভিশন সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের চিন্তা-ভাবনা আছে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন একটা আইন করতে চাই, যা শুধু গ্রহণযোগ্যই নয়, যুগোপযোগী হবে। সেক্ষেত্রে টেলিভিশন মিডিয়া কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে প্রস্তাব করব। তাদের সিদ্ধানের ওপরই নির্ভর করবে, টেলিভিশনকে তারা ডাকবে কি না।’
উদ্বেগ জানানো ধারায় কী আছে
২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা ও মদদ দিলে সর্ব্বোচ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড; জরিমানা ৫০ লাখ টাকা।
২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শনমূলক তথ্য প্রেরণ করেন, কাউকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করতে তথ্য প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, তাহলে এটা অপরাধ হবে।
প্রথম দফায় এ অপরাধে শাস্তি হবে তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। দ্বিতীয়বার বা বারবার একই অপরাধ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ করে, তাহলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড, ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড একসঙ্গে দেওয়া হবে।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, তাহলে তা ডিজিটাল অপরাধ। এই অপরাধের জন্য ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৩২ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করেন বা সহায়তা করেন, তাহলে সর্ব্বোচ ১৪ বছরের সাজা, ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানা হবে কোটি টাকা।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..