নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দুর্নীতিকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, দুর্নীতির ব্যপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না। নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার কর্মদিবসের প্রথম দিনে আজ এটর্নি জেনারেল কার্যলয় ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিমকোর্ট বার) দেয়া সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ।
নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে সম্বর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তৃতা করেন এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিমকোর্ট বার এর পক্ষে সম্পাদক ব্যারিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল)।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ১ নং বিচার কক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সাবেক এটর্নি জেনারেল, সিনিয়র এডভোকেট, আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ, বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও গনমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সম্বর্ধনা শেষে নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেলা ১২টা থেকে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
সম্বর্ধনার জবাবে বিচার বিভাগের দুর্নীতি নির্মূলে অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে তিনি বলেন, দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না। কোনো রকম দুর্নীতি হলে জড়িত যেই হোক না কেন সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট সকলকে এই অভিপ্রায় জানাতে চাই যে, বিচার বিভাগে কোনো দুষ্ট চক্রকে ন্যুনতম প্রশ্রয় দিব না। দুর্নীতি একটি ক্যান্সার। কোনো আঙুলে যদি ক্যান্সার হয় তার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে আঙুলটি কেটে ফেলা। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেয়া হবে ঘোষণা দেন প্রধান বিচারপতি।
বিচার বিভাগ নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাবেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার কোনো অশুভ শক্তি বা গোষ্ঠীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ যদি দুর্বল, সমস্যাগ্রস্ত হয় তাহলে শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারবে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ এবং ব্যক্তিকে বার বার স্মরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক শক্তি পরাজিত হবে।
প্রধান বিচারপতি বিদ্যমান মামলা জট কমানো, বিচার বিভাগ থেকে দুর্নীতি দূর করা, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয়ে কাজ করার কথা ব্যক্ত করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, বার ও বেঞ্চ হলো একটি দেহে দুটি ডানা। জুডিশিয়ারি হলো দেহ।
দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ৩১ ডিসেম্বর শপথগ্রহণ করেন। বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতিকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা যোগ দেন।
এর আগে ৩০ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ বিষয়ে বুধবার ৩০ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। তার নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।