২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেয়া হবে।
আজ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন। এ সময় আদালত বলেছেন-এ রায় বাংলায় দেবেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ, সহকারী এটর্নি জেনারেল এ মোহাম্মদ শাহীন মৃধা।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে দেশকে নেতৃত্বশুন্য করতে আসামিদের সুদুরপ্রসারী ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় ষড়যন্ত্রের কথা আসামি স্বীকার করেছেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের অপরাধ প্রমাণে যুক্তি প্রমাণ আইন ও বিভিন্ন রেফারেন্স উপস্থাপন করেছে। বিচারিক আদালতের রায় বহাল থাকবে বলে এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ আশা প্রকাশ করেন। তারা জানান ভাষার ফেব্রুয়ারিতে এ রায় আদালত বাংলায় দেবেন বলে জানিয়েছেন।
আদালতে শুনানিতে পলাতক আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী অমূল্য কুমার সরকার। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আহাসান।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এ আপিল শুনানি শুরু হয়।
২০০০ সালে কোটালীপাড়া সফরের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল।
সমাবেশের দু’দিন আগে ২০ জুলাই কলেজ প্রাঙ্গণে জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী বোমার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
পরে ওই কলেজের উত্তর পাশে সন্তোষ সাধুর দোকানঘরের সামনে থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের বোমাটি উদ্ধার করে। পরদিন ২১ জুলাই গোপালগঞ্জ সদর থেকে ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়।
এসব ঘটনায় আলাদা দু’টি মামলা দায়ের হয়। ২০১০ সালে মামলা দু’টি ঢাকার ২ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
২০১৭ সালের ২০ আগস্ট দুই মামলার একটিতে ১০ আসামিকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন আদালত। রায়ে আদালত বলেন, “হাইকোর্টে বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে গুলি করে দশ আসামির দন্ড কার্যকর করা হোক।”
এছাড়া একজন আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও তিনজনের ১৪ বছর করে কারাদন্ডও দেন আদালত।
অন্য মামলায় ৯ জনকে ২০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণার এক সপ্তাহের মাথায় ২৭ আগস্ট বিচারিক আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স, রায় ও মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসাহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ওমর।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত মেহেদী হাসান ওরফে আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী খানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
আসামি আনিসুল ইসলাম, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও সারোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদন্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদন্ডের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।
মামলায় আনা অভিযোগ বিষয়ে মুফতি হান্নানের আদালতে দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০০০ সালের জুলাই মাসে জঙ্গি সংগঠন হুজির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ওই বছরের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থল ও হেলিপ্যাডের কাছে দুটি শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল।
উল্লেখ্য সমাবেশের আগে পুঁতে রাখা বোমা পুলিশ উদ্ধার করে। ফলে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়।