এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র্যাব-৭ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে র্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বড় কুমিরা এলাকায় ডাকাতির ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাত দলকে খুঁজতে থাকেন র্যাব সদস্যরা। ঘটনাস্থল থেকে ৩০ গজ দূরে সড়কের পাশের ঝোপঝাড় থেকে হঠাৎ র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি করে। কয়েক মিনিট পর ডাকাত দলের সদস্যরা পিছু হটে। ঘটনাস্থলে অজ্ঞাতপরিচয় এক ডাকাতকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ডাকাতের নাম নুরুল আফছার ওরফে সেলিম (৩০)।
লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থল তল্লাশি করে ডাকাতি করা মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া সেখানে বিদেশি পিস্তল, দুটি ওয়ানশুটারগান, ১১টি গুলি, ৭টি খালি গুলির খোসা, ৩টি ছোরা, ৪টি রামদা, ২টি লোহার পাইপও পাওয়া যায়।
ডাকাতি হওয়া গাড়িতে ২১ জন ছিলেন। তাঁদের একজন পাখি আক্তার। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে তাঁরা কুমিল্লার লাকসামে যাচ্ছিলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর ননদের মেয়ের বিয়ে হয় কুমিল্লার লাকসামে। দিনের বেলায় সবার কাজ থাকায় রাত দেড়টায় হাটহাজারীর আমান বাজার থেকে গাড়িতে (পিকআপ) করে লাকসামের উদ্দেশে রওনা হন। সীতাকুণ্ডের বড় কুমিরা বাইপাস এলাকায় গাড়িটি পৌঁছার পর হঠাৎ গাড়ির চাকায় কিছু একটা লেগে নষ্ট হয়ে যায়। চালক গাড়ি থেকে নেমে দেখেন, চাকায় লোহার ছোট পাইপ ঢুকেছে। ঠিক তখনই ছয়-সাতজন অস্ত্র ও কিরিচ নিয়ে হাজির হয়। তারা সবার কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। টাকা দিতে দেরি করায় পুরুষদের লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করা হয়।
পাখি আক্তার বলেন, সবকিছু হারিয়ে তাঁরা লাকসাম না গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে ছোট কুমিরায় (ডাকাতির ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে) র্যাবের টহল দলকে ঘটনাটি খুলে বলেন।
সড়কের যে এলাকায় ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে, সেখান থেকে ২০ গজ দূরের একটি বাড়ির বাসিন্দা নাছিমা বেগম বলেন, প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ভয়ে তাঁরা ঘর থেকে বের হন না। কয়েক মাস আগেও রাত আটটার দিকে পুলিশ ডাকাতদের ধাওয়া দেয়।
একই বাড়ির বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভোর সোয়া চারটার দিকে প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পান। কিছুক্ষণ পর আবারও মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনেন। ডাকাতি হচ্ছে মনে করে ভয়ে তাঁরা ঘর থেকে বের হননি।’
ওই লাশ গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হয়। বিকেলে মর্গে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাঁদছেন এক নারী। তাঁর নাম নাদিরা পারভীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় মুঠোফোনে তাঁর ভাই সেলিমের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। গতকাল সকালে এক লোক মুঠোফোনে তাঁর ভাইয়ের লাশের ছবি দেখালে তিনি মর্গে ছুটে আসেন। তাঁর ভাই চাষাবাস করে সংসার চালান। তিন বছরের এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে সেলিমের। তাঁর দাবি, সেলিম ডাকাতিতে জড়িত নয়। তবে পাঁচ বছর আগে তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় ডাকাতির একটি মামলা হয়েছিল।