- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-২১
- ৭১৮ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- বাসচাপায় পা হারানো রোজিনা আক্তার নিম্ন আয়ের মানুষ। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে কতই বা আয় তার। সে উপায়ও আর রইল না।
হাসপাতালে শুয়ে থাকা রোজিনা যদি চিকিৎসায় বেঁচেও যান, তার ভবিষ্যত জীবনের চাকা কীভাবে চলবে, সেই প্রশ্নের জবাব নেই।
রোজিনারা ছয় বোন, এক ভাই। সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা মা। সংসারের খরচের একটি বড় অংশ যোগান দিতেন এই তরুণী। এখন সবই পড়ে গেল অনিশ্চয়তায়। তার চিকিৎসার পাশাপাশি আর্থিকভাবে পুনর্বাসনও জরুরি।
শুক্রবার রাত আটটার দিকে বনানীর সৈনিক ক্লাব থেকে মহাখালীর মাঝামাঝি স্থানে বিআরটিসির বাসের চাপায় রোজিনার ডান পা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাকে পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভি ও প্রকাশিতব্য দৈনিক সারাবাংলার প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাড়িতে আট বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করেন রোজিনা। হাসপাতালে আনার পর এখন পর্যন্ত চিকিৎসার ব্যয় এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকই বহন করছেন।’
ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘শুক্রবার তার (রোজিনা) ছুটি ছিল। সে বেড়াতে গিয়েছিল। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে। আর খবর পেয়ে আমি এখানে এসেছি। আমি যতটুকু পারছি সাহায্য করছি। আপনারা নিউজ করলে তার উপকার হয়।’
রোজিনার মামি মাজেদা খাতুনও ছিলেন হাসপাতালে। তিনি জানান, রোজিনারা ছয় বোন ও এক ভাই। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানায় তাদের বাড়ি। তার বাবার নাম রসূল মিয়া। তিনি একজন কৃষক।
মাজেদা খাতুন জানান, বড় বোন ও রোজিনা মিলে তার পরিবারের খরচ বহন করতেন। এখন মেয়েটির মতো তার পরিবারও অনিশ্চিতার মধ্যে পড়ে গেছে।
রোজিনার বাবা রসূল মিয়াও মেয়ের দুর্ঘটনার খবর শুনে ঢাকায় শুনে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘সংসার চলবে কিবা (কেমন করে) এইডা আমি ভাবতাছি। আমার মাইয়াডার ভবিষ্যত কী অইব? কে কী কইরা খাইব? আমার তো সামর্থ নাই। তার চিকিৎসা করবাম কিবায়?’
রোজিনা ঢাকাটাইমসকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বান্ধবীর বাসা থেকে নিকেতনের উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। সৈনিক ক্লাব থেকে কোন বাস না পেয়ে সে হেঁটে মহাখালীর দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনিসহ কয়েকজন রাস্তা পার হচ্ছিলেন। দূর থেকে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসকে তিনি ইশারা দিলে বাসটির গতি ধীর হয়ে আসে। কিন্তু হঠাৎই চালক তার সামনে এসে বাসের গতি বাড়িয়ে দেন। এসময় তার পায়ের উপর দিয়ে একটি চাকা উঠে যায়।
হাসপাতালের চিকিৎসক মিরাজ উদ্দিন মোল্লা ঢাকাটাইমসকে জানান, রাতে যখন রোজিনাকে হাসপাতালে আনা হয় তখন তার পা দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। রক্তনালী, হাড়, মাংস সবই আলাদা ছিল। তার পায়ের অধিকাংশ মাংসপেশী বাসের চাকায় থেঁতলে গেছে।’
‘অনেক সময় দেখা যায় এসব রোগীর কিডনি ও হার্টের সমস্যা হয়। তাই ৭২ ঘন্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। কাল গেলে বোঝা যাবে রোগীর কী অবস্থা।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা রোগীর সুস্থতার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। প্রয়োজনীয় রক্ত এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। আরও রক্ত দ্রুত দেওয়া হবে। আগামীকাল রবিবার পায়ে ছোট খাটো একটি অস্ত্রোপচার করা হবে।’
‘তবে এই সব সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর শারীরিক অবস্থা সব সময় খারাপের দিকেই যায়। কারণ তার পা বাদেও শরীরে আরো আঘাত থাকতে পারে। যেমন পেটে, মাথায় আঘাত থাকতে পারে; যেগুলো এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তবে সে ভালো আছে, আশা করা যায় ভালো থাকবে।’
রোজিনার শরীরে বড় কোন ক্ষত পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আপাতত আমরা কোন আঘাত দেখিনি। তবে ভেতর ভেতর এসব রোগীর আঘাত থাকে। ৭২ ঘন্টা পর বোঝা যাবে। আপাতত রোগী ভালো আছে।’
পুলিশ এই ঘটনায় রাতেই বাসের চালক শফিকুল ইসলাম সুমনকে আটক করেছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী ঢাকাটাইমসকে জানান, আটক বাস চালককে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে তার সহকারীকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..