- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-১৬
- ৭৪৩ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় আহত আলমুননাহার এ্যানী শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে এখন শ্রীপুরের বাড়িতে। কিন্তু ইতিমধ্যে হারিয়েছেন তার জীবনের একটি অংশকে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বেঁচে আছেন বটে, তার কষ্টের প্রহর বাড়াচ্ছে একই দুর্ঘনায় প্রাণ হারানো স্বামী ও সন্তানের নানাধরনের স্মৃতি।
বুধবার বিকালে তাদের জৈনাবাজারের বাড়িতে এ্যানীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের প্রতিবেদকের। সেখানে উঠে আসে এসব কথা।
আলমুননাহার এ্যানী জানান, স্বামী-সন্তান হারানোর পর দীর্ঘ প্রায় এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করতে হয়েছে, সে সময়টায় স্বামী ও সন্তানের শূন্যতায় তার কষ্ট বাড়ত, আর এখন তাদের স্মৃতিগুলোই বারবার চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে।
বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা থেকে সবকিছু স্বামী ফারুক হোসেন প্রিয়কের নিজ হাতে গড়া। বাড়ির প্রতিটা কক্ষের আসবাবে রয়েছে তার নিপুণ হাতের ছোঁয়া। আর এ বাড়িতে স্বামী ও সন্তান ছাড়া তাকে থাকতে হবে এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। হারানো মানুষগুলোর স্মৃতিগুলোই এখন প্রতিনিয়ত কষ্টের প্রহর বাড়াচ্ছে তার।
ঘটনার এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি আলমুননাহার এ্যানী। গত ১০ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই স্বামীর বাড়িতে ওঠেন। এরপর নিজের কষ্ট কমানোর জন্য একবার ত্রিশালে বাবার বাড়িতে গিয়েছেন। কিন্তু দম বন্ধ হয়ে আসায় সেখানেও থাকতে পারেননি। অবশেষে স্বামী-সন্তানের স্মৃতিময় কষ্টের মধ্যেই থাকার সিদ্ধান্ত নিজের মনকে জানিয়ে দিয়েছেন।
আলমুননাহার এ্যানী শ্রীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হতে চান, কারণ স্বামী প্রিয়ক চেয়েছিল তার স্ত্রী যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হন, স্বামীর স্বপ্ন পূরণেই তার এখন একমাত্র লক্ষ্য। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আলমুননাহার এ্যানীর বাকি জীবনটা মানুষের কল্যাণে কাটানোরও স্বপ্ন।
আলমুন নাহার এ্যানীর বাবা খসরু আহমেদ ঢাকাটাইমসকে জানান, তাদের পরিবারটি এখন বড় অসহায় হয়ে পড়েছে। তার একমাত্র পুত্র অপি ২০১৭ সালে পানিতে ডুবে মারা গেছে। এখন তার মেয়ের জামাই ও নাতনিও চলে গেল। আহত এ্যানী দেশে আসার পর থেকেই সার্বক্ষণিক তিনি ও তার স্ত্রী এ্যানীর পাশে রয়েছেন। অনেকটা চাপা স্বভাবের এ্যানী এখন কথা কম বলেন, একাকি লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করেন। তাকে স্বাভাবিক করতে সবধরনের সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাবা-মা। কিন্তু বারবার তার শোকের কাছে হেরে যাচ্ছেন তারা।
মানুষের কল্যাণেই যাবে ফারুকের সহায় সম্পদ
ফারুক হোসেন প্রিয়কের মা ফিরুজা বেগম জানান, স্বামী শরাফত আলীকে হারিয়েছেন কয়েক বছর হলো। তাদের পরিবারে দুই প্রজন্মের দুজন- তার একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও একমাত্র নাতনি তামাররা প্রিন্ময়ীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই পরিবারটির প্রজন্ম শেষ হয়ে গেছে। তিনি নিজে আর কয় বছরই বা বাঁচবেন, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের সহায়-সম্পদ যা কিছু আছে সবই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবেন।
এজন্য প্রথমে ফারুকের অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ফারুকের অসমাপ্ত বাড়ির কাজ শেষ করে তার সংগ্রহে থাকা চিত্রকর্মগুলো সংরক্ষণ করবেন। ফিরোজা বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পরে পুরো বাড়ি ওয়াকফ এস্টেটে দান করে দেবেন, যেখানে তার মৃত্যুর পর পুরো বাড়ি ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হবে।’
এ ছাড়া ফারুকের পৈতৃক ভিটায় একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করার চিন্তার কথা জানান তিনি।
গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার একটি বিমানে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে ছিলেন মামাতো ফুফাতো দুই পরিবারের পাঁচ সদস্য। বিমানটি বিধ্বস্ত হলে মারা যান ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও তার শিশুকন্যা তামাররা প্রিয়ন্ময়ী। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মা আলমুন নাহার এ্যানী।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..