×
ব্রেকিং নিউজ :
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের আমরা যেন ভুলে না যাই : নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে : জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার হবিগঞ্জে মা-মেয়ে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড ওএমএস-এর আওতায় ৪৫ পয়েন্টে ভর্তুকি মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি হচ্ছে ‘অপশক্তির দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়’ আমিরাতের শীর্ষ কোম্পানিসমূহ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী : রাষ্ট্রদূত ভারত ঐতিহ্যগত ওষুধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে জ্ঞান বিনিময়ে আগ্রহী নদী বাঁচাতে আবরার ফাহাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পথ নির্দেশ করবে : নাহিদ ইসলাম দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের পদত্যাগ
  • প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-১২
  • ১০৫৬ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, এই পদ্ধতি থাকলে বারবার আন্দোলন হবে, বারবার মানুষের কষ্ট হবে। তাই কোটা না থাকাই শ্রেয়। প্রতিবন্ধী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা জয়েন করতে পারবে।’ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত রবিবার থেকে তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর আছে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জানতে চেয়েছিলেন সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে তার অবস্থা কী। আর প্রধানমন্ত্রী এটা নিয়ে কথা বলেন ১৫ মিনিটের মতো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংস্কার করতে গেলে, কয়দিন পর আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। কোটা থাকলেই হবে সংস্কার। আর না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই।’ ‘আমাদের কেবিনেট সেক্রেটারি তো আছে, তাকে আমি বলেই দিয়েছি, সংশ্লিষ্টদেরকে যাদের নিয়ে বসে কাজ করবে। এবং তারা দেখবে।’ ‘কিন্তু আমি মনে করি এই আন্দোলন বারবার হবে। বারবার শিক্ষায় সময় নষ্ট হবে। এই যে পরীক্ষা নষ্ট হলো।’ বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে পাঁচ ধরনের কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা রয়েছে। ১৯৯০ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে জামায়াত ছাত্র সংগঠন শিবিরের ইন্ধনে আন্দোলনে নামার চেষ্টা হয়। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। তবে সম্প্রতি কোটা ১০ শতাংশে নমিয়ে আনার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে’ আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। গত ৮ এপ্রিল শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ শুরু করে। আর সোমবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এক মাসের মধ্যে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানানোর পর ছাত্ররা তা মেনে ৭ মে অবধি আন্দোলন স্থগিত করে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ছাত্ররা আবার আন্দোলনে ফেরে। আর আজ সকালে সংবাদ সম্মেলনে সাত দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণার দাবি করে তারা। এর মধ্যে সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না বলে জানান। আর কিছুক্ষণ পর ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। ততক্ষণ যেন ছাত্ররা ধৈর্য ধরে। প্রধানমন্ত্রী সোমবারের সমঝোতা বৈঠকের পরও আন্দোলনের সমালোচনা করেন। বলেন, ‘জেলা কোটা আছে, জেলায় জেলায় যে ইউনিভার্সিটি, সেখানেও তারা রাস্তায় নেমে গেছে। তারা যখন নেমে গেছে, জেলায় যারা তারাও চায় না, এরাও চায় না।’ ‘কেউই চায় না, তাহলে ঠিক আছে, কোনো কোটাই থাকবে না। কোনো কোটা থাকার দরকার নাই।’ ‘স্বাধীনতার পর চাকরিতে মেয়েদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা করে দেন। এখন দেখি মেয়েরাও নেমে গেছে রাস্তায়, কোটা সংস্কার, কোটা চায় না। আমি ধরে নিচ্ছি তারা কোটা চায় না।’ ‘যখন আলোচনা হয়েছে ওবায়দুল কাদেরের সাথে, সেখানে মহিলা প্রতিনিধি ছিল। তারা বলে দিয়েছে তারা কোটা চায় না। পরীক্ষা দিয়ে চলে আসবে। খুব ভালো কথা, আমি তো খুশি। আমি নারীর ক্ষমতায়নে সব থেকে বেশি কাজ করেছি। আজকে সব জায়গায় নারী। তারা যখন চায় না, তাহলে কোটার দরকারটা কী? কোটা পদ্ধতিরই দরকার নাই।’ গত কয়েকদিনের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সমস্ত ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস বন্ধ। পড়াশোনা বন্ধ, ভিসির বাড়ি আক্রমণ। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে সেখানে যানজট, মানুষের কষ্ট, সাধারণ মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষ বারবার কষ্ট পাবে কেন?’। ‘বারবার এই কষ্ট বন্ধ করার জন্য। বারবার এই আন্দোলন, এই ঝামেলা মেটানোর জন্য কোটা পদ্ধতিই বাতিল। পরিষ্কার কথা। আমি এটাই মনে করি, সেটা হলেই ভালো।’ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানানোর পর আন্দোলন কেন? সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলন, ‘ক্যাবিনেট মিটিং, সেখানে আমরা বিষয়টা আলোচনা করেছি। আমাদের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের সাথে বসল। সেই সাথে সাথে আমি কেবিনেট সেক্রেটারিকে নির্দেশ দিলাম, আপনি এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন এবং যাদের যাদের সঙ্গে দরকার তাদের সঙ্গে বসুন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন, তারা যে দাবি করছে তার যৌক্তিকতা কী আর মন্ত্রীর সঙ্গে বসুন।’ ‘কেবিনেট সেক্রেটারি নিজে প্রেসে কথাটা বলেন। অনেকে মেনে নিল, অনেকে মানল না। সারারাত বেশ অনেক ছাত্রছাত্রী টিএসসিতে থেকে গেল।’ ‘কেন? যখন আলোচনা হচ্ছে, কথা হচ্ছে, তখন এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে?’ ‘আর ভিসির বাড়ি ভাঙা, আগুন দেয়া এমনকি পহেলা বৈশাখে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে অনেক কিছু তৈরি হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়, সেগুলো পুড়িয়ে পুড়িয়ে ভেঙেচুরে সব তছনছ। এটা কী ধরনের কথা। ছাত্ররা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করবে কেন?’ ‘আর মেয়েরা যে গেট ভেঙে বাইরে চলে আসল গভীর রাতে, আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত আমি নানককে পাঠিয়েছি। সে ওখানে গেল ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিসহ। সে ওখানে কথা বলল এমনকি প্রেসকে বলল আমরা এটা নিয়ে দেখছি, তোমরা আগুন দিয়ো না, ভাঙচুর করো না।’ ‘তাদের বলা হলো আলোচনা করব। তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলো। তারপরও তারা কোনো কিছু মানবে না। সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি ঢাকার বাইরে সব রাস্তায় নেমে গেছে।’ সোমবার ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (আন্দোলনকারীরা) আলোচনা করল, সুনির্দিষ্ট তারিখ দিল, কেবিনেট সেক্রেটারিকে আমি দায়িত্ব দিলাম। সে সময়টা দিল না।’ ‘মানি না মানি না বলে তারা যখন বসে গেল, সব সেখানে জেলায় জেলায় যুক্ত হলো।’ ‘আমরা কি ‍কিছুই বুঝি না?’ পশ্চাদপদ শ্রেণিতে ‍তুলে আনতে সুযোগ সুবিধা দেয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব জানিয়ে আন্দোলনকারীদের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘আমরা একটা নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি’ এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছেলে মেয়ে, অনেকে নাতির বয়সী, তাদের কিসে মঙ্গল হবে, এটা কি আমরা কিছুই বুঝি না? তাদের কিসে ভালো হবে, আমরা তা জানি না?’ ‘তথ্য না জেনে আন্দোলন’ আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিল, সাধারণ মেধা কোটায় সংরক্ষিত কোটার চেয়ে কম নিয়োগ হয়। এই তথ্য অসত্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘১৯৭২ সাল থেকে এই কোটা চলছে, সময়ে সময়ে সংস্কার করা হয়েছে। কোটা যাই থাক আমরা কিন্তু সব সময় যখনই যে কোটা পূরণ না হয়, আমরা তালিকা থেকে চাকরি দিয়ে দেই।’ ‘৩৩ তম বিসিএসে ৭৭.৪ শতাংশ, ৩৫ তম বিসিএসে ৬৭.৪৯ এবং ৩৬ তম বিসিএসে ৭০.৩৮ ভাগ মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ পেয়েছে।’ আগে কোটায় পাওয়া না গেলে নীতিমালা শিথিল করে সাধারণ মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেয়া হতো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি নীতিমালা করে দিয়েছেন। ‘আমি জানি না, ছাত্ররা এই খবরটা রাখে কি না।’ ‘বিসিএস পরীক্ষা যারা দেয়, তারা সকলেই মেধাবী। কেউ মেধার বাইরে না। তারা সকলেই তো পরীক্ষা দেয়। রিটেনে সকলকে পাস করতে হয়। সেই পাস করা থেকেই চাকরিটা দেয়া হয়।’ ‘তাদের দাবিনামায় এটাও বলা আছে, যেখানে কোটায় পাওয়া যাবে না, সেখানে মেধা তালিকা থেকে দিতে হবে। আমরা তো ওটা কার্যকর করেই ফেলেছি। তারা কি এটাও জানে না?’ ‘আমার দুঃখ লাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো প্রফেসর, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়র কোনো কোনো প্রফেসর আবার এই সুরে কথা বলছে। কিন্তু তারা এটা দেখেনই না, আমরা মেধা তালিকা থেকে এই নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছি।’ ‘নিয়োগ যদি না দিতাম, তাহলে ৭৭ শতাংশ বা ৭০ ভাগ নিয়োগ কীভাবে পেত তারা?’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat