- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-১১
- ৭৪৬ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে দেশ যখন স্থবির, তখন দৃষ্টি ছিল তার দিকে। তিনি কিছু বলেন কি না। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলেননি শেখ হাসিনা।
ফলে সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি কী বলেন, তা নিয়েই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে নানা সময় আন্দোলন সফল না হওয়ার পর এবার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়েছে। আর সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারীরা এক মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করে। কিন্তু পরদিন আবার কর্মসূচিতে ফিরে যায়। আর আজ সকালে আন্দোলনকারীরা জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ছাড়া তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবে না।
এর মধ্যে ওবায়দুল কাদের জানান, সন্ধ্যায় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলবেন শেখ হাসিনা। ততক্ষণ ধৈর্য ধরার কথা বলেন তিনি।
এর মধ্যে বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র রজত জয়ন্তী (২৫ বছর পূর্তি) অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কোনো ঘোষণা দেন কি না, দৃষ্টি ছিল আন্দোলনকারীদের।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখতে হবে, এমন কথাও জানান। কিন্তু কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে কিছুই বলেননি তিনি।
অবশ্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ‘বার্তা’ জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাই। সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসে তারা দুই জন জানান, শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোনো কোটাই থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, সেই সুরের ধারা ২৫ বছর আগে গড়ে তোলেন প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। পরে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি ব্যাপক পরিচিতি পায়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা, মুক্তি সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সঙ্গীত শিল্পীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
সুরের ধারার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুরের ধারার সবচেয়ে বড় যে কাজটি আমরা দেখেছি, একেবারে সমাজের অবেহলিত শিশু, তাদেরকে গান শেখানো, তাদেরকে মূল ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা তারা চালিয়েছে, সেটার জন্য আমি বন্যাকে সত্যিই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
‘যারা একেবারে নিঃস্ব, মানবেতর জীবনযাপন করে, তাদেরকে সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে নিয়ে আসা এবং তাদের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, সেই প্রতিভা বিকশিত করার প্রচেষ্টা একটা বিরাট কাজ।’
বঙ্গবন্ধুর পরিবার রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় করেছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘একটা জাতিকে যদি উন্নত করতে হয়, তাহলে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তি না, সাংস্কৃতিক মুক্তিটাও একান্তভাবে প্রয়োজন।
সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রটা প্রসারিত করা জরুরি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রেও যা যা করা প্রয়োজন, সেটা আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
‘আমি বিশ্বাস করি সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা বা সহায়তা ছাড়া কখনও সাংস্কৃতিক বিকাশ হতে পারে না। এটা সংস্কৃতি, খেলাধূলা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আওয়ামী লীগ সর্বাত্নক চেষ্টা করে যাচ্ছে। একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সাংস্কৃতিক চর্চা যেন বিকশিত হয়, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামেও কত সুপ্ত প্রতিভা রয়ে গেছে, সেগুলো শুধু তুলে আনা, খুঁজে বের করে আনা এবং তাকে মূলধারায় নিয়ে আসা। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
রেজওয়ানা চৌধুরবী বন্যা এই কাজটা করতে চান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন।
সংস্কৃতির অঙ্গনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী তার গলা ভাঙার কথা উল্লেখ করেন। বলেন, ‘কিছুক্ষণ পরে আবার সংসদে যাব। বুধবারটা আমার প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নের সম্মুখীন হবে, আমি উত্তর দেব। সে জন্য আর কিছু বলতে চাই না। আমি এখানে এসেছি, কিছু গান শুনব।’
প্রধানমন্ত্রী সুরের ধারার রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী বন্যা প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনের ছবি ও সংবাদ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে আনন্দআলো পত্রিকার প্রকাশ হয়। চ্যানেল আই এর কর্ণধার ফরিদুর রেজা সাগর এবং প্রধান বার্তা সম্পাদক শাঈখ সিরাজ প্রধানমন্ত্রীর হাতে সে পত্রিকা তুলে দেন।
সব শেষে প্রধানমন্ত্রী বন্যার নেতৃত্বে একদল শিল্পীর কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত উপভোগ করেন।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..