- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-০৫
- ৮৩৫ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- সিন্ডিকেটের কারণে নয়, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে সম্প্রতি দাম বেড়েছিল বলে দাবি করেছেন রড ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ স্টিল মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে। জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত ২০ মার্চ প্রেসক্লাবে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সংবাদ সম্মেলন করে রড সিমেন্টের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে দাবি করে। রিহ্যাব নেতারা বলেন, সরকারের নতুন ট্যাক্স ভ্যাট বৃদ্ধিতে দাম বাড়লে তাকে যৌক্তিক দাম বাড়ানো বলব। এছাড়া এখন যেভাবে হঠাৎ করে দাম বাড়ছে সেটাকে আমরা যৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি বলব না। কস্টিং বৃদ্ধির অজুহাতে মূল্য বৃদ্ধি কখনই যৌক্তিক নয়। সিন্ডিকেটের কারণে রড সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবি করেন রিহ্যাব নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মাদ শহিদউল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে রডের প্রতি টন কাঁচামালের মূল্য বেড়ে ৩১২ ডলার থেকে ৪২৭ ডলার হয়েছে। ফলে টনপ্রতি দাম বেড়েছে নয় হাজার ৮৯২ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩৭ শতাংশ। এছাড়া কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ডলারের মূল্য ৮০ টাকা থেকে ৮৪ টাকা অর্থাৎ চার টাকা প্রতি ডলারে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি টনে খরচ বেড়েছে ১৭০৮ টাকা। অন্যদিকে কেমিক্যাল (স্পঞ্জ আয়রন ও ফেরো অ্যালয়েজ) মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে প্রতি টনে যথাক্রমে ১৫১৯ টাকা ও ৪৭০ টাকা।
এসময় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রডের মূল্যবৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ তুলে ধরে লিখিত বক্তেব্যে বলা হয়েছে, চট্রগ্রাম পোর্টে ভ্যাসেল হতে সরাসরি ডেলিভারি প্রদান না করে পণ্য অফডকে স্থানান্তরের কারণে চার্জ ৩২০ টাকা থেকে ১০০৮ টাকা হয়েছে। এখানে প্রতি টনে ব্যয় বেড়েছে ৬৮৮ টাকা। বৃদ্ধির হার ২১৫ শতাংশ।
পরিবহন খরচ (কন্টেইনারজনিত) প্রয়োজনীয় ট্রেইলার না থাকায় কন্টেইনার ফেরতে বিলম্বের কারণে ব্যয় ৩০০ টাকা। সরকার কর্তৃক এক্সেল লোড আইনের প্রবর্তনের কারণে প্রতি টনে খরচ বেড়েছে ৪৮০ টাকা, গত জুলাই মাসে প্রতিটি ট্রেইলারের ভাড়া ছিল ২৬ হাজার টাকা যা বর্তমানে ৩৮ হাজার টাকা। সেখানে ব্যয় বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রতি টনে ট্রাক ভাড়া বেড়েছে ৬৮৮ টাকা, যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও গ্যাসের চাপ কমজনিত ব্যয় তিন হাজার ১৬৫ টাকা থেকে চার হাজার ১৩১ টাকা হয়েছে, সেখানে প্রতি টনে বেড়েছে ৯৬৬ টাকা, যা বৃদ্ধির হার ৩১ শতাংশ। এছাড়া প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের মূল্য ৭.৫৭ টাকা হতে ৮.১৫ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রতি কিলোওয়াটে ০.৫৮ টাকা ব্যয় বেড়েছে। ফলে প্রতি টন রড উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০৮ টাকা।
ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশ হতে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রতি টন রড উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০০ টাকা।
সার্বিকভাবে বর্তমানে প্রতি টন রড উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ হাজার ৪১৯ টাকা। বর্তমানে প্রতি টন রডের মূল্য ৭০ হাজার টাকা যা আগে ছিল ৫৪ হাজার টাকা (প্রায়)। রডের দাম বেড়েছে ১৬ হাজার টাকা অর্থাৎ ৩০ শতাংশ। তাই উৎপাদন ব্যয় যে হারে বেড়েছে সে হারে রডের দাম বাড়েনি।
রডের মূল্য বাড়ার সমস্যা সমাধানের স্বল্পমেয়াদে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে শহিদউল্লাহ বলেন, সরকার কর্তৃক এক্সেল লোড আদেশ স্টিল শিল্পের ক্ষেত্রে শিথিল করা, অফডকে স্টিল পণ্য প্রেরণ না করে সরাসরি পোর্ট হতে ডেলিভারি প্রদান করা।
এই ব্যবসায়ী বলেন, কাঁচামালের স্ক্র্যাপের ওপর আরোপিত সিডি ১৫০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা এবং এআইটি ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা, কেমিক্যাল ফেরো অ্যালয়েজ এর ওপর আরোপিত এআইটি ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১২০০ টাকা এবং আরডি ১৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা।
এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ আদেশটি ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করে এই সময়ের মধ্যে সামর্থ্য গড়ে তোলার সুযোগ প্রদান করা। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনকে আরও গতিময় ও আকর্ষণীয় করার জন্য এই খাত হতে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূরকরণে ট্যাক্স বিরতি প্রদান করাসহ অন্যান্য সুযোগ প্রদানের সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক অ্যাসোসিয়েশনর পক্ষে মনোয়ার হোসেন, সুমন চৌধুরী, মোহম্মাদ শাজাহান, জাকিরুল চৌধুরী প্রমুখ।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..