পরিবারে যুদ্ধাপরাধী থাকলেও আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়া যাবে বলে গত ২৮ জুন জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সেতুমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ ঝেড়েছেন একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী ও শিক্ষাবিদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ।
এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য ডা. নুজহাত চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
“যদি তাই হয়, তবে যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা শহীদ সন্তান–তারা দূরে সরে যাবে। বীরের রক্ত কখনো খুনির রক্তের সাথে মিলতে পারে না। হয় ওদের নেবেন, না হয় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারদের নেবেন। সিদ্ধান্ত আপনাদের। প্রমাণিত পরীক্ষিত রক্তের সৈনিক চান না, নাকি পিঠে ছোরা মারা, আপসকামী বিশ্বাসঘাতকদের রক্তের সুসময়ের কোকিলদের দলে চান। ফলাফল ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন আশা করি। ফলাফল এখন এই সুদিনে বোঝা যাবে না। ভয় হয়, ভুল সিদ্ধান্ত নিলে, এমন একদিন আসতে পারে যেদিন আবার প্রয়োজন হবে এই পরীক্ষিত সৈনিকদের সমর্থন। চোখের জলে, বুকের অভিমানে সরে যাওয়া লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সেই প্রাপ্তিহীন মানুষগুলো আবার আসবে আপনাদের সমর্থনে–সেটাও নিশ্চিত। কারণ ‘বিশ্বস্ততা’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তৃণমূলের কিছু না পাওয়া মানুষগুলোর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সেটা বাবার থেকে, দাদার থেকে অনেক ত্যাগের মাধ্যমে পারিবারিক পরম্পরায় শিখেছে। কিন্তু, প্রশ্ন হল, বিরুদ্ধ সময়ে আঘাত পেয়ে, সুসময়ে উপেক্ষিত হয়ে, আপনাদের নতুন সুবিধাভোগী শ্রেণীর দৌরাত্ম্যে–এই পরীক্ষিত মানুষগুলো ততদিন টিকে থাকবে তো? যদি থাকে, আবার আসবে তাঁরা অন্য কোনো এক ’৭১-এ, আবার বুকের রক্ত ঢেলে দেশপ্রেমের মূল্য দিতে, আসবে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কিন্তু যদি সেদিন তারা টিকে না থাকে, সেই দুর্দিনে কে দাঁড়াবে আপনাদের পাশে? কেন দূরে ঠেলে দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এই কোটি কোটি নীরব সমর্থকদের? যাদের দলে নিতে চাইছেন তারা শুধু ৩০ লক্ষ শহীদের হত্যাকারীই নয়, তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী, রাসেলের হত্যাকারী। তারা এখনও প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু কণ্যাকে হত্যার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেন এদের দলে নিতে চাইছেন? ভাবছেন তারা আপন হবে? সাপ কখনও পোষ মানে? আমি বিশ্বাস করি না এটা আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত। এ মাসে সদস্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত জানতে চাই।”
তবে ওবায়দুল কাদের তাঁর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘আগামী ২১ জুলাই থেকে আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী কেউ (আওয়ামী লীগে) আসতে পারবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী পরিবার হলে সেখানে আমরা সদস্য সংগ্রহ করি না। তারা সদস্য পদ নিতে পারেন না। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের যে নীতিমালা সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে থাকা পরিবারের কেউ যদি আওয়ামী লীগে আসতে চায় আমাদের তো প্রশ্ন থাকবেই। এখানে আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রশ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্ন এখানে আমরা আপস করতে পারি না।’