প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই শহরে অধিকাংশ বাসিন্দারই জীবন কাটে ভাড়া বাসায়। বছরের শুরুতে তাদের মোকাবেলা করতে হয় ভাড়া বৃদ্ধির বিড়ম্বনা।
এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর বাড়ির মালিকেরা নিজেদের ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিয়েছেন বাড়ি ভাড়া। প্রতিবছর এই সময়ে ভাড়া বাড়ানো বাড়িওয়ালাদের অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! বছরের শুরুতে এই বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন ভাড়াটিয়ারা।
তীব্র আবাসন সংকটের এই রাজধানীতে ভাড়াটিয়ারা অনেকটাই জিম্মি বাড়ির মালিকদের কাছে।
ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, ভাড়াটিয়াদের সুযোগ সুবিধা বাড়ুক আর না বাড়ুক বছরের শুরুতেই একটা স্লিপ ধরিয়ে দেবে বাড়িওয়ালারা। বছরের শুরুতে এ এক প্রকারের যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে।
অন্যদিকে, মালিকদের দাবি সারা বছরে আর একবারেও বাসা ভাড়া বাড়ানো হয় না, সে হিসেবে পানি বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বেড়েই চলেছে। এসবের সঙ্গে তাল মেলাতে বাসা ভাড়া বাড়াতেই হয়। বছরে একবার ভাড়া বাড়বে ভাড়াটিয়াদের ধরে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, রাজধানীতে ২০১৬ সালে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৮৮ শতাংশ।
মিরপুরের সেনপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া লিটন সরকার। তিনি একটা বেসকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এবার তার কর্মস্থল বেতন-ভাতা না বাড়ালেও বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়েছে হাজার টাকা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাড়ে চার বছর ধরে এই আছি। প্রতি বছরের শুরুতেই বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দেয়। জানুয়ারি আসলেই আমার টেনশন শুরু হয়। প্রথম বছর ৫‘শ করে বাড়ালো, এখন এক হাজার বাড়ানোর নোটিশ দিলো। যে হারে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ বাড়ছে, তার সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি-সব মিলে এই বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে তাল মেলানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর ফ্ল্যাট বাড়িতে এক হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পযর্ন্ত বাসা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। টিনশেডের বাসায় ৫০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
আজিমপুরের ভাড়াটিয়া জয়ন্ত বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আমি এক বছর হলো এ বাসায় উঠেছি। বিদ্যুৎ ছাড়া বাসা ভাড়া সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। বাসায় ওঠার সময় মালিকের সঙ্গে কথা ছিলো, দুই বছর ভাড়া বাড়াবে না। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই এক হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজিমপুর নিউ পল্টনের টিনশেড বাসায় থাকেন আশরাফুল আলম সোহাগ। একটি অ্যাপার্টমেন্ট হাউজে স্বল্প বেতনে কেয়ারটেকারের কাজ করেন তিনি।
তিনি জানান, ৬ মাস হলো সাড়ে চার হাজার টাকায় উঠলাম। এর মধেই ৫০০ টাকা বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছে। কারণ জানতে চাইলে বলে, না পোষালে চলে যান।
শুধু ফ্ল্যাট ও টিনশেড বাসায় নয়, সাবলেট, মেছগুলোতেও জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বাড়িওয়ালারা।
বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জসিম উদ্দিন নামে এক বাড়িওয়ালা জানান, বছরের মধ্যে সরকার পানি-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে বছরে একবার ভাড়া বাড়ানোতে দোষের কিছু দেখি না। আমাদেরও তো চলতে হয়।
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বছর বছর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বছরের শুরুতে একটা স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া মালিকরা একটা নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে। সরকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় এটা বন্ধ হচ্ছে না। বাড়ির মালিকদের এ দৌরাত্ম্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিয়ে বন্ধ করতে হবে।
রাজধানীতে ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করতে সিটি করপোরেশন ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা শহরকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। এছাড়া ২০১৫ সালের ১ জুলাই বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সার্বিক সমস্যা নিরসনে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে এখন পযর্ন্ত এ কমিশনও গঠন করা হয়নি বলে জানা যায়।