- প্রকাশিত : ২০১৮-০৫-০৬
- ৭১৫ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- সুনামগঞ্জের হাওরে গত ২ মাসে বজ্রপাতে ১১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০জন। বজ্রপাতের ভয়ে হাওরে ধান কাটতে চান না শ্রমিকরা। এতে বিপাকে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।
জেলার সদর উপজেলা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিক পরিবারগুলো। একই সঙ্গে বৈশাখী ঝড়, শ্রমিক সংকটে ধান শুকাতেও পারছেন না কৃষক। এই সুযোগে অনেক শ্রমিক ধান কাটতে দ্বিগুণ টাকা দাবি করছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে কৃষকদের। বিপরীতে বাজারে ধানের দাম না থাকায় লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
স্থানীয়রা জানায়, বজ্রপাতে নিহত শ্রমিক কৃষকরা প্রত্যেকেই জেলায় নিজ নিজ এলাকার হাওরে ধান কাটতে গিয়ে হতাহত হন। গত ১০মার্চ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কাচিঁরভাঙ্গা হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান কৃষক মোহাম্মদ জালু মিয়া (৪৫)। তিনি পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের ডিগারকান্দি গ্রামের মৃত মনাফ আলীর ছেলে। ১১ এপ্রিল একই উপজেলার ডিগারকান্দি গ্রামের মৃত মনাফ আলীর ছেলে মোহাম্মদ জালু মিয়া (৪৫) ও জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আদরিছ মিয়ার ছেলে সুহেল মিয়া(২৩) বজ্রপাতে নিহত হন। ২৯ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান লিটন মিয়া নামে এক কৃষক।তিনি সৈয়দপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার ছেলে। এর একদিন পর সোমবার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে মারা যান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া নামের আরেক কৃষক। তিনি কানাইঘাট উপজেলার বড়চতল ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীর ছেলে। ১ মে সদর উপজেলার মোল্লারপাড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের রশিদ (৪৫), জামালগঞ্জ উপজেলার কমলা কান্ত তালুকদার (৫৫), একই উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের কলকতা গ্রামের মুক্তার আলীর ছেলে হিরণ মিয়া (৩০), বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে ধান কাটার সময় ধনপুর ইউনিয়নের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে আলম মিয়া (৫০), উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গড়কাটি গ্রামের মৃত লাল মামুদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ জাফর মিয়া (৩৬) বজ্রপাতে মারা যান। ৫ মে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের গৌরারং (ইসলামগঞ্জ) ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও সাফেলা গ্রামের রাদিকা দাশের মেয়ে একা রানী দাশ (১৮) মারা যান। একই গ্রামের মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে এখলাছুর রহমানও মারা যান বজ্রপাতে।
এদিকে বজ্রপাতে আহত নবীন চন্দ্রউচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সৈকত তালুকদার (১৫), তার সহোদর পিংকু তালুকদার (২৫) ও একই গ্রামের জ্ঞান তালুকদার (৪৫) বজ্রপাতে আহত হন। তাহিরপুর উপজেলায় শনির হাওরে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন বাদাঘাট থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিক লিয়াকত মিয়া ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আহত হন। আহতারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অপর আহতরাও চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার কর্মকর্তারা বজ্রপাতে নিহত ও আহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দা সেলিম হায়দার, মাসুক মিয়া বলেন, হাওরপাড়ের মানুষদের মধ্যে সারাক্ষেই কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অকালে প্রাণ হারানো পরিবারগুলো এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। বজ্রপাতে মারা যাওয়া ঠেকাতে ও হতাহত পরিবারগুলোর পাশে দাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, হাওর পাড়ে শ্রমিক সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে পাকা ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় দিশাহারা হাওরের কৃষক। আবহাওয়ার বৈরী আচরণে জেলার প্রতিটি উপজেলায় দ্রুত ধান কাটতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এতে কৃষকরা নিজ পরিবারের লোকজন নিয়েই পাকা বোরো ধান কাটছেন।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..