নানা কর্মসূচি ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা।
আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রফেসর আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ তথ্য জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন,টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মপ্রয়াস গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।
উপাচার্য জানান, ইতিহাসের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন যথার্থ নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেশ ও দশের কল্যাণে পূর্ণরূপে আত্মনিয়োগ করতে যে মানুষটি পর্দার আড়ালে থেকে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার ও নিরলস শ্রম দিয়েছেন ,তিনি আর কেউ নন,বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর অসাধারণ অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্টট স্টাডিজ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আবার এসডিজি-২০৩০ অর্জনে ও পরিপ্রেক্ষিতে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বিশেষ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম,পাঠক্রম উন্নয়ন,প্রশিক্ষণ কার্যক্রম,মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনায় এসডিজি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ঢাবি শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, কোভিড-১৯ টিকার উন্নয়নসহ বিভিন্ন টিকা ও ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এবং এএফসি এগ্রো-বায়োটেক কোম্পানীর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমেরিকান কোম্পানি জেএনডি বায়োটেক এবং ইমেরজেন্ট বায়োটেক এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘আইটি হাব’ তৈরি করা হবে।
এসময় তিনি জানান, ঢাবি’র শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তার হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ পুনঃপ্রবর্তনসহ বিশেষ গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ২৫০টির অধিক গবেষণাসহ নানা শিক্ষা ও গবেষণা সহযোগী উপাদানের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। প্রবর্তন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বর্ণপদক’। প্রতিবছর ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষির্কীতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদক প্রদান করা হবে। আগামী বছর থেকে এই পদক প্রদান করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনিস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টি এই স্বর্ণপদক প্রদান করবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য এই পদক মনোনীত করা হবে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘শতবার্ষিক স্মৃতিস্তম্ভ সেন্টিনারি মনুমেন্ট), মনুমেন্ট অব ইনফিনিটি রিফ্লেকটিং ভাষ্টনেস, ইনক্লুসিভনেস এন্ড ম্যাগনানীমিটি (অসীমতার স্তম্ভে বিশালতা, অন্তর্ভুক্ততা ও উদারতা) তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, আদর্শ, সংগ্রাম, ত্যাগ, দেশপ্রেম, নেতৃত্বসহ সকল বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনিস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টি ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের সমন্বয়ে ‘বঙ্গবন্ধু বক্তৃতামালা’ এর আয়োজন করা হচ্ছে। প্রকাশিত হবে বিভিন্ন গ্রন্থ ও সংকলন ।
তিনি বলেন, শ্যাপিং অব বাংলাদেশ শীর্ষক ‘শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ স্মারক সংকলন, সমাবর্তন বক্তা এবং উপাচার্যদের বক্তব্য নিয়ে একটি সংকলনগ্রন্থ, শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে ‘ফটো অ্যালবাম,‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অর্জন ও প্রত্যশা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রবন্ধ নিয়ে প্রবন্ধ সংকলন, নির্বাচিত কবিতা নিয়ে ‘কবিতা সংকলন’ ইত্যাদি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অনুষ্ঠিত হবে ৬টি আন্তর্জাতিক সেমিনার (ওয়েবিনার), দেশে ও বিদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রতিষ্ঠিত অ্যলামনাই এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের নিয়ে ঢাকায় ‘হিস্টোরি অব দি ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা এন্ড হাইয়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ, সায়েন্সেস ফর সোসাইটি, আর্টস, লিটারেচার এন্ড কালচার, বিজনেস ফর সাসটেইনিবিলিটি, সোশ্যাল সায়েন্সস ফর লাইফ অ্যান্ড লিভিং, ফিউচারস অব হাইয়ার এডুকেশন’ শিরোনামে এই ৬টি আন্তর্জাতিক সেমিনার (ওয়েবিনার) অনুষ্ঠিত হবে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।