কৃষক বান্ধব বর্তমান সরকার কৃষির উন্নয়নে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এদেশের কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করছে। ন্যায্যমূল্য দিয়ে ধান কিনে কৃষকের পরিশ্রমের মর্যাদা দিতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যেন অবৈধ মজুত করে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
আজ নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি আমন সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, খাদ্যের নিরাপত্তায় মজুত বৃদ্ধি করতে সরকার সচেষ্ট। আমরা বোরো সংগ্রহ অভিযানে সফল হয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় আমন সংগ্রহেও সফলতা অর্জন সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধামুক্তির লক্ষে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, খাদ্য অধিদপ্তেরর মহাপরিচালক শেখ মুজিবর রহমানসহ বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্য নিয়ন্ত্রক,কৃষক প্রতিনিধি, কৃষকলীগের নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি এবং মিল মালিক প্রতিনিধি ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।
পরে খাদ্যমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন।
এবছর সংগ্রহ মৌসুমে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল এবং ১.৫ লাখ মেট্রিক টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি। সংগ্রহ অভিযান আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ২৫১ উপেজলায় কৃষকের অ্যাপ ব্যবহার করে কৃষক কার্ডের বিপরীতে প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন চাল খাদ্য গুদামে দিতে পারবেন।
গত ৩১ অক্টোবর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের আমন মৌসুমে তিন লাখ টন আমন ধান, ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল কেনা হবে। এছাড়া আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেড় লাখ টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবছর আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও গমের মূল্য প্রতি কেজি ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মূলত প্রান্তিক চাষীদের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতেই প্রতি বছর বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ করে সরকার। আগে আমন মৌসুমে শুধু চাল সংগ্রহ করা হতো। ২০১৯ সাল থেকে আমন মৌসুমে চালের পাশাপাশি ধানও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে মাঠ পর্যায়ে ধানের দাম ভালো পাচ্ছে কৃষক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে দুই লাখ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়। চলতি বছর তা ১ লাখ টন বাড়িয়ে ৩ লাখ টনে উন্নীত করা হয়েছে। ২০২০ সালের আমন মৌসুমে ২ লাখ টন ধান, ৬ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত বছর প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ধান ও ৩৭ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল কেনা হয়েছিল। গত বছরও সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছিল ৭ নভেম্বর।
গত ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ১৫ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল ১৩ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন ও গম ২ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন।
এর আগে খাদ্যমন্ত্রী নিয়ামতপুর উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন এবং বক্তৃতা করেন।