চারদিনের টানা বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেইসাথে সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও।
জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যে নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত ১০৫ পরিবারের ৪ শতাধিক সদস্যকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তাদেরকে নগরীর ৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে ২৫ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুখ।
এদিকে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। নগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা, রাহাত্তারপুল, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চাক্তাই, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড়, আগ্রাবাদের এক্সেস রোড, মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল এবং হালিশহরের নিচু এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়। লকডাউনের কারণে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কর্মস্থলে যেতে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। রিকশাচালকরা বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছামত ভাড়া দাবি করেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই লোকজনকে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। রাস্তায় পানি জমে থাকায় পথচারীদের বেগ পেতে হয়।
নগরের চান্দগাও আবাসিক, সিডিএ, কর্ণফুলী, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ বেশ কিছু এলাকা বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘুরে হাঁটু থেকে কোমর পানি দেখা গেছে। এতে এসব এলাকায় জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সেই সাথে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও রয়েছে।
বৃষ্টিতে পানি জমেছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নিচ তলাতেও। বুধবার বিকেল থেকে হাসপাতালের আশেপাশের এলাকাসহ নিচতলায় পানি জমতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে পানি একটু কমলেও দুপুরের পর বৃষ্টিতে ফের আগের অবস্থা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হক।
তিনি বলেন, একটু বেশি বৃষ্টি হলে আগ্রাবাদ এলাকায় পানি আসে। হাসপাতালও যেহেতু এই এলাকায়, তাই হাসপাতালেও নিয়ম মেনে পানি আসে। তবে আমরা বৃষ্টি শুরুর পর পানি আসার আগেই নিচতলায় জরুরি বিভাগ, শিশু বিভাগসহ যেসব সেবা ছিল সেসব উপরে সরিয়ে নিয়েছি।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা ইমাম হোসেন বলেন, ‘আসলে অল্প বৃষ্টিপাতেই এখানে পানি জমে যায়। এখন তো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে তাই পানি হবেই। তা ছাড়া পাশের খালে সিডিএ’র বাঁধ থাকায় আরও সমস্যা হচ্ছে।’
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ শেখ হারুনর রশীদ বলেন, আমরা সাধারণত ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে ভারী বর্ষণ বলি, ৮০ বেশি হলে অতিভারী। সেই হিসেবে চট্টগ্রামে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে এখন। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অতিভারী বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। অতিভারী বর্ষণের কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি উচ্চাতার হওয়ায় শহরে পানি আসছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।