মহামারি করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে রোগীদের চিকিসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে গত ১০ মাসে ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯২২ টাকা রাজস্ব আয় করেছে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল ।
জেলা আধুনিক হাসপাতাল সূত্র বাসস’কে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী সকলের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে দেড়’শ শয্যার জেলা আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এখানকার চিকিৎসা সেবার মান তুলনামূলক ভালো হওয়ায় জয়পুরহাট জেলার পাঁচ উপজেলা ছাড়াও পার্শবর্তী বিশেষ করে নওগাঁ জেলার বদলগাছী, ধামইরহাট উপজেলা, দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর , ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার অনেক রোগী আসেন এ হাসপাতালে। ফলে জেলা আধুনিক হাসপাতালে বহি: বিভাগ ও অন্ত: বিভাগে রোগীর চাপ সব সময় বেশি থাকে। কখন বেডের বাইরেও মেঝেতে রোগী রেখে চিকিৎসা প্রদান করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক’শ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে দেড়’শ শয্যার পথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকার চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে জেলা আধুনিক হাসপাতালে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, ফোরডি কালার ডপলার আল্ট্রা¯েœাগ্রাফী মেশিন, ইলেক্ট্রোলাইট এনালাইজার অটো মেশিন, হরমান পরীক্ষার জন্য ইমুইনুএসাই এনালাইজার, ব্লাড সুগার, ক্রিয়েটিনিনসহ অন্যান ্যপরীক্ষার জন্য এনালাইজার বায়ো-ক্যামিষ্ট সেমি অটো মেশিন, সেল কাউন্টার অটোমেটিক মেশিন, কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালসিস বেড ৫টিসহ হিমো ডায়ালসিস মেশিন ৫টি , ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, অটোমেটিক ডায়ালাইজার মেশিন, ইএনটি এক্সিমিনেশন লাইট, মাইক্রোসস্কোপ বায়নুকুলার, ল্যাপরেসকপিক এডাল্ট সার্জিক্যাল এ মেশিন গাইনী ওয়ার্ড ও ডেন্টাল ইউনিটের জন্য আলাদা প্রদসহ ইকো কালার ডপলার, অক্স্রিজেন কনসেনট্রেটর ১০টি এবং অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৪৬ টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৯ জন চিকিৎসক। বিশেষ করে সিনিয়র কনসালটেন্ট অর্থো, সার্জারী ও গাইনী শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে, জুনিয়র কনসালটেন্ট স্কিন এন্ড ভিডি, চক্ষু, এনেসথেশিয়া, কার্ডিওলজি, ইএনটিসহ আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ২টি, ইমারজেন্সী মেডিক্যাল অফিসার ৪টি ও জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসারের ২টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়াও দক্ষ জনবলের অভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিকিৎসা উপকরণ বিশেষ করে হিমো ডায়ালসিস মেশিন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি এখন। বর্তমান সময়ে মহামারি করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন চিকিৎসকরা। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে জেলা আধুনিক হাসপাতালে বহিঃবিভাগে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬ শ ৬০ জন, জরুরী বিভাগে ২৭ হাজার ২৩১ জন, ভর্তি থাকা ২৩ হাজার ৬৪১ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১ হাজার ৩৫০ জন প্রসূতি মায়ের স্বাভাবিক ডেলিভারীসহ সিজারিয়ান ৩৯৪ জন, মেজর সার্জারী এক হাজার ৫৪৩ জন, মাইনর সার্জারী ৪ হাজার ৫৬৩ জন, অর্থো-সার্জারী বিভাগে মেজর ৫৪০ জন ও মাইনর ৫ হাজার ৪ শ ১০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
জেলা হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, একই সময়ে ইপিআই কার্যক্রমের আওতায় ১ হাজার ৪৯০ জন শিশুকে টিকা প্রদানসহ জলাতংক প্রতিষেধক হিসেবে ৪ হাজার ১১৬ জনকে র্যাবিক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডঃ সামছুল আলম দুদুর নেতৃত্বে পরিচালিত হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বক্ষণিক তদারকিতে জেলার প্রায় ১২ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল। জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯২২ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। বর্তমান সরকারের ভিশন সকলের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ কর্মসূচীর আওতায় জেলা আধুনিক হাসপাতালের শূন্য পদে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া জরুরী বলে জানান, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যতম সদস্য রাজা চৌধুরী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ দক্ষ জনবলের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান, জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: মো: সরদার রাশেদ মোবারক। দক্ষ জনবল পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো উপকরণ গুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আরও উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।