তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ করোনাভাইরাসে সৃষ্ট এই দুর্যোগময় মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মালিক ও চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে বেসরকারী রেডিও এসোসিয়েশন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ ও টিভি ড্রামা ডিরেক্টরস গিল্ডের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এন্টিসেপটিক সাবান, হ্যান্ডসেনিটাইজার, মাস্ক বিতরণ এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের জন্য পিপিই বিতরণকালে এ কথা বলেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, এফটিপিও’র সভাপতি মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি মো. শাহ জালাল, সাধারণ সম্পাদক এম জি কিবরিয়া ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. মতিউর রহমান তালুকদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, অনেক সময় অসহায় রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, কারণ সর্দি-কাশি হলেই কেউ করোনাভাইরাসের রোগী নাও হতে পারেন। আর করোনা রোগী হলেও তার সাহায্যও তো আমাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। অনেক চিকিৎসক-নার্স করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, সে কারণেই এ পর্যন্ত যাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সনাক্ত হয়েছিল, তাদের মধ্যে বিরাট অংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং অনেকেই এই সেবা পাচ্ছেন।
তথ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, যারা প্রাইভেট মেডিকেল হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনা করেন, তারা আজকের এই দুর্যোগময় মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়াবেন। জনগণ থেকে পালিয়ে বেড়াবেন না।
তিনি বলেন, জনগণ যাতে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পায়, সেটি তারা নিশ্চিত করবেন, সেটিই হচ্ছে জনগণের ও জাতির প্রত্যাশা। আর যারা এ কাজগুলো করছে, সরকার যে সেগুলি নজর রাখছে না, তা কিন্তু নয়।
হাছান বলেন, কোন হাসপাতাল দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে, কোন হাসপাতাল সুযোগ থাকা স্বত্বেও রোগী ফেরত দিচ্ছে, সেগুলো সরকার অবশ্যই খোঁজ-খবর রাখছে। আর যারা এ কাজগুলো করছে, সরকার সময়মত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
দুর্যোগ মোকাবেলায় বিএনপি দায়িত্বশীল বিরোধীদল হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি বিএনপি দায়িত্বশীল বিরোধীদল হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়ানো তাদের কর্তব্য।’
তিনি বলেন, আমরা বিএনপিকে এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলা আর কিছু লিফলেট বিতরণ করা ছাড়া জনগণের পাশে দাঁড়াতে আমরা তাদের দেখিনি। সরকার নানাভাবে আজকের দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুযোগপোযুগী পদক্ষেপের কারণেই সম্ভবপর হয়েছে। তাই এই দুর্যোগের সময় অর্থনীতিকে সচল রাখা, আর যাতে অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত না হই এবং ভবিষ্যতে যে বিশ্বমন্দা তৈরি হতে পারে, সেজন্য কি কি করা প্রয়োজন সেটি খতিয়ে দেখে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ৩১ দফা নির্দেশনা প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যে ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন তা সঠিকভাবে মেনে চললে আমরা এই দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এই ৩১ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুর্যোগ সম্পর্কে সর্বোচ্চ ওয়াকিবহাল রয়েছেন। সেজন্য তিনি অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন এবং যেখানে যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেখানে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
তিনি বলেন, আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারব।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ থেকে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের প্রথ্যন্ত অঞ্চলেও এই উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। আর কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে।
হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েচিলেন। সে আহ্বানের প্রেক্ষিতে দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রীও বিতরণ করা হচ্ছে।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী বেসরকারী রেডিও এসোসিয়েশন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ ও টিভি ড্রামা ডিরেক্টরস গিল্ডের নেতৃবৃন্দের হাতে বিশেষ ধরণের এন্টিসেপটিক সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের জন্য পিপিই তুলে দেন।