স্পোর্টস ডেস্ক:
-শততম টেস্টে জয়ের রেকর্ড খুব কম দলেরই আছে, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের। এবার সেই বিরল রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছে বাংলাদেশও। কলম্বোর পি সারা ওভালে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্টে জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সাকিব-তামিমরা।
এটি বাংলাদেশের নবম টেস্ট ম্যাচ জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও ইংল্যান্ডের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুটি ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
১০০ টেস্টে নয়টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আসুন জেনে নেই সেই নয় জয়ের গল্প :
চট্টগ্রাম; ৬-১০ জানুয়ারি, ২০০৫ : ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পরিসরে এই মুহূর্তটির জন্য দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষা আর প্রার্থনায় ডুবে ছিলেন। অবশেষে চট্টগ্রামে সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ পায় প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান সংগ্রহ করে বাশার বাহিনী। আর প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ৩১২ রানে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২০৪ রানে। ফলে জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৮১ রানের। পঞ্চম দিনে এসে দারুণ খেলছিলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা-ব্রেন্ডন টেলর, ১৫ ওভারেই তুলে ফেলেন ৬৬ রান। কিন্তু ৪৪ রান করা টেলরকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফেরান এনামুল হক জুনিয়র। আর তাতেই যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল জিম্বাবুয়ে। এরপর মাশরাফি ও এনামুল হক জুনিয়রের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ২২৬ রানের জয়টাই হয়ে আছে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ঘটনা। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের ৩৫তম ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ।
কিংসটন; ৯-১৩ জুলাই, ২০০৯ : বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলার কারণে সিরিজের আগে নাম সরিয়ে নেন ক্রিস গেইল, চন্দরপলসহ অনেক ক্রিকেটার। এ কারণে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে মাঠে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেমার রোচ, ড্যারেন স্যামিদের সামনে সিরিজের প্রথম টেস্টে মাত্র ২৩৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। জবাবে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ৩০৭ রান তোলে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৩৪৫ রানে। ২৭৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে ক্যারিবিয়ানরা অলআউট হয় ১৮১ রানে, দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। ৫১ রানে ৫ উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
গ্রানাডা; ১৭-২০ জুলাই, ২০০৯ : সিরিজ জয়ের ম্যাচে মাঠে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৩৭ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ট্রেভিস ডাওলিন করেন ৯৫ রান। রাকিবুল ইসলাম ও মুশফিকুর রহিমের কার্যকরী ইনিংসে ২৩২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৯ রানে অলআউট হলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১৫ রানের। সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ৯৬ রানে ভর করে চার উইকেট হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ ও সিরিজসেরা হন সাকিব।
হারারে; ২৫-২৯ এপ্রিল, ২০১৩ : বাংলাদেশের চতুর্থ জয়টা আসে আরো চার বছর পর ২০১৩ সালে। হারারাতে প্রথমে ব্যাটিং করে সব উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৩৯১ রান। সাকিব, মুশফিক ও নাসির হোসেন হাফ সেঞ্চুরি করেন। চিগুম্বুরা বীরত্বে ২৮২ অলআউট হয় স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ১০৯ রানের লিডের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে আরো ২৯১ রান যোগ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি করেন সাকিব, মুশফিক ও নাসির। ৪০১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার সেঞ্চুরিতেও মাত্র ২৫৭ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ১৪৩ রানের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে অবশ্য হেরেছিল বাংলাদেশ।
মিরপুর; ২৫-২৭ অক্টোবর, ২০১৪ : সাকিব আল হাসানের ছয় উইকেটে জিম্বাবুয়েকে ২৪০ রানে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশও আটকে যায় ২৫৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের মাত্র ১১৪ রানে গুটিয়ে দেয় মুশফিক বাহিনী। ৩৯ রানে আট উইকেট নিয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তাইজুল ইসলাম। এরপর সাত উইকেট নিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১০১ রান তুলে নেয় টাইগাররা। এই ইনিংসে কোনো রান না করে তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তবে সাকিব-মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের বীরত্বে শেষ পর্যন্ত জয় পায় বাংলাদেশ।
খুলনা; ৩-৭ নভেম্বর, ২০১৪ : টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে তামিম আর সাকিবের দুই সেঞ্চুরিতে ৪৩৩ রান তোলে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে কম যাচ্ছিল না জিম্বাবুয়েও। মাসাকাদজার ১৫৮ রানে ভর করে ৩৬৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হক ও শুভাগত হোমের হাফ সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ফলে জিম্বাবুয়ের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১৪ রান। সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম ও যুবায়ের হোসেন লিখনের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ১৫১ রানেই। ১৬২ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম; ১২-১৬ নভেম্বর, ২০১৪ : একই সিরিজে তৃতীয় জয় পায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে ৫০৩ রানের বিশাল সংগ্রহ জমা করে বাংলাদেশ। সিকান্দার রাজা, চাকাভা, চিগুম্বুরা ও মাসাকাদজার শতকে ৩৭৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। মুমিনুল হকের শতক ও তামিম ইকবালের অর্ধশতকে দ্বিতীয় ইনিংসে আরো ৩১৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ২৬২ রানে। ১৬৮ রানে জয় পায় বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ড; ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ : মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে হারায় বাংলাদেশ। দুই টেস্টে মোট ১৯ উইকেট তুলে সিরিজসেরা হন মেহেদী হাসান মিরাজ। এটি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। ২৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৬৪ রানে শেষ হয় ইংলিশদের ইনিংস। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল (১০৪) ও মুমিনুল হক (৬৬) ১৭০ রানের অনবদ্য জুটিতে বড় রানের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে মঈন আলির ৫ উইকেটে শেষ ৫১ রানে ৯ উইকেট হারায় টাইগাররা। এর ফলে মাত্র ২২০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে মিরাজের ছয় ও তাইজুলের তিন উইকেটের ঘূর্ণিঝড়ে ২৪৪ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। ২৪ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ইমরুলের হাফসেঞ্চুরি এবং তামিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দায়িত্বশীল ইনিংসে ২৯৬ রানের ভালো সংগ্রহ পায় গড়ে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ২৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ১০০ রান তোলেন কুক (৫৯) ও বেন ডাকেট (৫৬)। তবে মিরাজ ও সাকিব তোপে পড়ে মাত্র ৬৪ রানের ১০ উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। ফলে ১১৩ রানের বিস্ময়কর জয় পায় বাংলাদেশ।
কলম্বো; ১৫-১৯, ২০১৭ : নিজেদের শততম টেস্টে বাংলাদেশ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে চার উইকেটে হারিয়েছে। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার কারা ৩৩৮ রানের জবাবে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে (১১৬) বাংলাদেশ ৪৬৭ রান গড়ে ১২৯ রানের লিড নেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৯ রান করে বাংলাদেশের সামনে ১৯১ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু মুশফিক বাহিনী ছয় উইকেট হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।