- প্রকাশিত : ২০১৭-০৩-১৩
- ৪৯১ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশ শত্রু এলে জবাব দেব :প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি:-সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজিত হলো বহুল প্রত্যাশিত দুটি আধুনিক সাবমেরিন ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।
রবিবার চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে সাবমেরিন দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি সাবমেরিন দুটির অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বানৌজা বঙ্গবন্ধু, নেভাল এভিয়েশনের দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি এমপিএ এবং নৌ কমান্ডো সোয়াডস এর অংশগ্রহণে নৌবাহিনীর সক্ষমতা অর্জনের পরিচিতিমূলক একটি প্রদর্শনী প্রত্যক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রী সাবমেরিনের জন্য নির্মিত বিভিন্ন বেজ সাপোর্ট ফ্যাসিলিটিজের উদ্বোধন করেন। তিনি ‘বিএনএস শেখ হাসিনা’ ঘাঁটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা হবে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাবমেরিন ঘাঁটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে সংগৃহীত সাবমেরিন দুটি কনভেনশনাল ডিজেল-ইলেকট্রিক ধরনের সাবমেরিন, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার ও প্রস্থ ৭.৬ মিটার। এর সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল এবং ডিসপ্লেসমেন্ট ১,৬০৯ টন। টর্পেডো ও মাইন সজ্জিত এই সাবমেরিন দুটি শত্রু জাহাজ ও সাবমেরিনে আক্রমণ করতে সক্ষম।
কমিশনিং অনুষ্ঠানে সাবমেরিন যুগে প্রবেশের ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও আমাদের নৌবাহিনীর সাবমেরিন ছিল না। অত্যাধুনিক এই সাবমেরিন যুদ্ধ জাহাজ আমাদের নৌবাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়েছে। আক্ষরিকভাবেই এখন বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের মাত্র গুটিকতক দেশ সাবমেরিন পরিচালনা করে থাকে। সেই তালিকায় আজ বাংলাদেশের নাম স্থান পাবে। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ ছিল নৌবাহিনীর জন্য আকাশসীমা উন্মোচন। বর্তমান সরকারের আমলে হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন। শীঘ্রই এতে আরো মেরিটাইম এয়ারক্রাফট ও অত্যাধুনিক সমরক্ষমতা সম্পন্ন হেলিকপ্টার সংযোজিত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্বল্প সময়ে বিশাল সমুদ্র এলাকায় টহল এবং পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা অর্জন করেছে যা সমুদ্রসীমা ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডকে ফ্রিগেট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে অনেকখানি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে সংযোজিত সাবমেরিন দুটি দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে আত্মরক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। এর পাশাপাশি বহিঃশত্রুর আগ্রাসন হতে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারে সাবমেরিন দুটির অভূতপূর্ব সক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীর বহরে সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশের জলসীমায় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের ব্লকসমূহে অধিকতর নিরাপত্তাসহ সার্বিকভাবে দেশের ব্লু ইকনমি উন্নয়নে এই সাবমেরিন দুটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি সাবমেরিনের আধুনিকায়ন, নাবিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য চীন সরকার, নৌবাহিনী ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশকে একটি শান্তিপ্রিয় দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য। তবে বাঙালি জাতি কখনো অন্যায় ও অবিচারকে মেনে নেয়নি। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, জাতির আত্মমর্যাদার প্রশ্নে আমরা কোনোদিন আপোষ করিনি। ভবিষ্যতেও যেন কোনো অবস্থায় আমাদের সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত না হয় সেজন্য একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী আমাদের প্রয়োজন। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আমাদের সরকার আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অতীতের ন্যায় আমাদের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে কেউ যাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাই না। কিন্তু আমাদের ওপর যদি কেউ আক্রমণ করে তাহলে আমরা যেনো তার সমুচিত জবাব দিতে পারি সেই প্রস্তুতি আমাদের সবসময় থাকবে। সেইদিকে লক্ষ্য রেখে যা যা করণীয় তা আমরা করে যাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। আর শান্তি বজায় থাকলেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী সাবমেরিন চালনার কাজকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব উল্লেখ করে এর নাবিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের লক্ষ্য হবে সমুদ্রে সফলভাবে সাবমেরিন চালনার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে প্রকৃত অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হওয়া। পাশাপাশি এই নবগঠিত সাবমেরিন আর্মকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে নীতিমালা, অবকাঠামো ও ইকুইপমেন্ট দরকার তা তৈরি করার ক্ষেত্রেও আপনাদের অবদান রাখতে হবে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অসীম সাহসের সাথে সাবমেরিন চালনার চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌ ঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আবু আশরাফ তাকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..