ইরান বৃহস্পতিবার হামাসের রাজনৈতিক প্রধান শহিদ ইসমাইল হানিয়ার শেষকৃত্য ও শোক র্যালির আয়োজন করবে। তেহরানে হামলা চালিয়ে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।
দোহায় ইসমাইল হানিয়ার দাফনের আগে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হানিয়াহের জন্য প্রার্থনার নেতৃত্ব দেবেন। এরআগে তিনি এই হত্যার জন্য ‘কঠোর শাস্তি’ হুমকি দিয়েছেন।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বুধবার হানিয়ার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, হানিয়া এবং তার এক দেহরক্ষী ইরানের রাজধানীতে রাত ২টায় (২২৩০জিএমটি) তাদের বাসস্থানে হামলায় নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে প্রতিশোধমূলক হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যার কয়েক ঘন্টা পর ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পরিস্থিতিতে একটি ব্যাপক আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েল তেহরানের হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
খামেনি, যিনি ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ে চূড়ান্ত বক্তব্য রাখেন, তিনি হানিয়ার মৃত্যুর পরে বলেছেন, ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূখন্ডে তিনি শহীদ হওয়ায় তার রক্তের প্রতিশোধ নেওয়া আমাদের কর্তব্য’।
মঙ্গলবার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে হামাস নেতা তেহরানে ছিলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বুধবার বলেছেন,‘্ইহিুদিবাদীরা (ইসরায়েল) শীঘ্রই তাদের কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পরিণতি ভোগ করবে’।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মুসা আবু মারজুকও প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করে বলেছেন, ‘নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা একটি কাপুরুষোচিত কাজ এবং উত্তর এই হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবশ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তেহরান ও বৈরুতে হামলা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতির আরো ‘বিপজ্জনক মোড়’ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, সমস্ত প্রচেষ্টা গাজায় ‘যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যাওয়া’ এবং দক্ষিণ ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় আটক জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া উচিত।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবারও বলেছেন, গাজায় এখনই একটি যুদ্ধবিরতি ‘অত্যাবশ্যক’ ছিল।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি পরে বলেছেন, জোড়া হত্যাকান্ড আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাসে ‘সাহায্য করে না’।
বুধবার ভোর থেকে হানিয়ার হত্যার নিন্দা জানাতে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের শহরগুলোতে জনতা রাস্তায় নেমেছিল। তেহরানের প্যালেস্টাইন স্কোয়ারে ‘ইসরায়েলের মৃত্যু,আমেরিকার মৃত্যু’ কামনা করে শ্লোগান দিতে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিল।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান এখনও হামলার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
ইরান তার চিরশত্রুকে হামলার জন্য দায়ী করলেও ইসরায়েল হানিয়ার মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। তবে এটি হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরের হত্যার দাবি করেছে। যাকে ইসরায়েল-অধিভুক্ত গোলান মালভূমিতে সপ্তাহান্তে একটি মারাত্মক রকেট হামলার জন্য দায়ী করেছে।
গাজার যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যেই আঞ্চলিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই হত্যাকান্ডে সিরিয়া, লেবানন, ইরাক এবং ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে মধ্যে একটি ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা, হানিয়ার জন্য ‘তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে’, রাজনৈতিক নেতা মাহদি আল-মাশাত তার হত্যার জন্য ‘ফিলিস্তিনি জনগণ এবং হামাসের প্রতি সমবেদনা’ প্রকাশ করেছেন। গ্রুপের সাবা নিউজ এজেন্সি এ কথা জানায়।
এদিকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান হামলার পর ‘এ অঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা করতে ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বুধবার ইরানের অনুরোধে হামলা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছে, তেহরানের দূত আমির সাইদ ইরাভানি পরিষদ সদস্যদের ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
হামাস কয়েক মাস ধরে পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি-বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে, মিশর, কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় সহায়তা করেছে।
বিশ্লেষকরা এএফপি’কে বলেছেন, ইসলামপন্থী গ্রুপের মধ্যে হানিয়ার একটি মধ্যপন্থী প্রভাব ছিল এবং হানিয়ার অবস্থানে অন্য কারো প্রতিস্থাপনে হামাসের মধ্যে গতি প্রকৃতির পরিবর্তন হতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছেন।
হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৩৯,৪৪৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই নারী ও শিশু।
যুদ্ধবিরতির প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হানিয়ার হত্যাকান্ড পুরো মধ্যস্থতা প্রক্রিয়াকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, ‘এক পক্ষ যখন অন্য পক্ষের আলোচককে হত্যা করে তখন মধ্যস্থতা কীভাবে সফল হতে পারে?’