বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ব্যবসায় পরিবেশের উন্নয়নে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) কার্যক্রম পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনতে বর্তমানে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ আরজেএসসি পুরোপুরি ডিজিটাল ভার্সনে চলে যাবে, তখন কোন ডকুমেন্ট ম্যানুয়ালি দেয়া লাগবে না। একইসাথে কোম্পানি নিবন্ধন পুরোপুরি অনলাইনে পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত কোম্পানী আইন ১৯৯৪-এর সংষ্কার বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বারের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।
সেমিনারে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খান, আরজেএসসির রেজিস্ট্রার মো. আব্দুস সামাদ আল আজাদ, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান, দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইক্যাব) সাবেক সভাপতি মো. শাহাদত হোসেন এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাভেদ আখতার।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে আরজেএসসির শাখা অফিস স্থাপনের কোন প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবিত কোম্পানী আইনে দেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কিভাবে আরও বেশি সহযোগিতা করা যায়, তা নিরূপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বাণিজ্য সচিব বলেন, আইন মন্ত্রণালয় হতে খসড়া কোম্পানী আইনের উপর বেশ কিছু দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা নিয়ে কাজ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং দ্রুত তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে এটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, কোম্পানী আইনে বেশি মাত্রায় ক্ষমতা আরোপ ও শাস্তি দেওয়ার বিধান না থাকা প্রয়োজন, কারণ এতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের আস্থা বৃদ্ধি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান কোম্পানী আইনের সংস্কার এবং দ্রুত বাস্তাবায়ন এখন সময়ের দাবি। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি কর্পোরেট খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে কোম্পানী আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মত দেন।
ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন দীর্ঘদিনের পুরোনো এ আইনটি বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তশীল বৈশি^ক পরিস্থিতি মোকাবেলা ও বেসরকারিখাতের সক্ষমতা বাড়াতে যথেষ্ট নয়। এলক্ষ্যে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বাতœক ব্যবহারের মাধ্যমে অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার ব্যবহার বাড়ানো এবং মেধাসত্ত্ব আইনের ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, কোম্পানী আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে আরজেএসসি’র সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, কোম্পানী আইনে মার্জার এবং একুইজেশন অর্ন্তভূক্তির কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে কোন কোম্পানীর অবলুপ্তির প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়সাপেক্ষ, তাই প্রস্তাবিত কোম্পানী আইনে বিষয়টি সহজীকরনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা দরকার।
অনুষ্ঠানে অন্য আলোচকরা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সময়মত বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন, প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস, এসএমইদের জন্য সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ প্রদানের প্রস্তাব করেন।