জাতীয় সংসদের স্পিকারকে ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ এবং হুইপের জন্য বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
‘ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার বনাম রাষ্ট্র এবং অন্যান্য মামলায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে। ৩২ পৃষ্ঠায় দেয়া এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।। রায়টি লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির (পারিশ্রমিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ১৯৭৫ এর ১০ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। শুধু তাই না, দেশে-বিদেশে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরাও সরকারি খরচে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারী। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা) আইন, ১৯৭৫ এর ১২ ধারা অনুসারে নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশে-বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা ভোগ করে থাকেন। আর ‘স্পেশাল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্টস বিধি, ১৯৫০’ এর ১২ বিধির মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিকে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সুবিধা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পরে এ বিধির আলোকে ২০১৫ সালে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের চিকিৎসা ব্যয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করে। সুপ্রিমকোর্টের সব বিচারক এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা দেশে-বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বাধ্য। রায়ে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গের একটি হচ্ছে বিচার বিভাগ। সুপ্রিমকোর্টের বিচারকরা এই অঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে থাকেন। ফলে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। এসব বিধি-বিধান বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় কাচের মতো স্পষ্ট যে দেশে-বিদেশে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির আছে এবং এ বিষয়টি দেখভালের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি কমিটিও রয়েছে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, আইন সভার প্রধান হওয়ার পরও জাতীয় সংসদের স্পিকারের সে ক্ষমতা নেই। একটি ন্যায্য গণতান্ত্রিক দেশে এটি অপ্রত্যাশিত। একই মর্যাদার সাংবিধানিক পদধারীদের সবার সমান ও অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের (নির্বাহী ও বিচার বিভাগ) প্রধানদের মতো আইন সভার প্রধান হিসেবে স্পিকার বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন। ফলে আমরা (আপিল বিভাগ) মনে করি, সরকার জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ এবং হুইপের জন্য বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা স্পিকারকে দেয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাঁচটি মামলা গত ২৫ আগস্ট বাতিল করে দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি বোরহান উদ্দিন এ রায় দেন। আদালত রায়ে আরো বলেছেন, দুদক বা কোন কর্তৃপক্ষেরই উক্ত বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্পিকারের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা নেই।
আদালতে জমির উদ্দিন সরকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারোয়ার আহমেদ।
বিদেশে চিকিৎসার জন্য অবৈধ উপায়ে সরকারি অর্থ অনুমোদন এবং তা নগদে তুলে আত্মসাৎ, সরকারি বাসভবনের আসবাব কেনা ও তা আত্মসাৎ এবং অতিরিক্ত অর্থ তোলার অভিযোগে দুদক এ পাঁচটি মামলা দায়ের করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান ও উপসহকারী পরিচালক এসএম খবীরউদ্দিন বাদী হয়ে ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাগুলো দায়ের করেন। পরে ওই পাঁচ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত অভিযোগ আমলে নেন। এ অবস্থায় পাঁচ মামলা বাতিল চেয়ে জমির উদ্দিন সরকার হাইকোর্টে আবেদন করেন । হাইকোর্ট মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিলেন। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৯ মে হাইকোর্ট বিভক্ত আদেশ দেন। পরে তৃতীয় বেঞ্চ রুল খারিজ করে দেন। এরপর তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন।