ক্যান্সার নির্মূলে সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকে ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যা ভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং কর্মসূচির (ইপিসিবিসিএসপি)’ তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ গুরুত্বারোপ করেন।
প্রকল্পের আওতায় সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত ‘জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্টানিং এবং প্রতিরোধ কর্মসূচি’ পর্যালোচনার সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর করোনার চাইতে ক্যান্সারে তিনগুণ বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে বছরে দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়।
তিনি বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার সেন্টার থাকবে। সেজন্য ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হবে।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এই চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে দেড় শত মানুষ মারা গেছে এবং চল্লিশ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে। এ পর্যন্ত ৫০টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা.শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব রাশেদা আকতার, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, শুরুতে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে তাদেরকে বাঁচানো সম্ভব। স্তন ও জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং কার্যক্রম সফল করতে হবে।
উপাচার্য জানান, ক্যান্সারের আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরা তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আসেন। ফলে বেশিরভাগ রোগীকেই বাঁচানো সম্ভব হয় না।
অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা জানান, এই কর্মসূচীর অধীনে গত পাঁচ বছরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৪ লাখ মহিলার স্ক্রিনিং করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৪১ হাজার ৮ শত ৫৪ জনের ভায়া (জরায়ু মুখ ক্যান্সার) পজেটিভ ছিল এবং ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ হাজার ২ শত ৩৪ জনের সিবিই (স্তন ক্যান্সার) পজেটিভ ছিল। ভায়া পজেটিভ মহিলাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৯ শত ৫৩ জনের কল্পোসকপি, ১২ হাজার ৯ শত ৪৪ জনের হিস্টোপ্যাথলজি করা হয়েছে এবং ২০ হাজার ৩০ জনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এর কার্যক্রমের ফলে ২০১২ সালে স্তন ক্যান্সারের হার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে অর্থাৎ ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং একই সময়ে জরায়ু মুখ স্তন ক্যান্সারের হার ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে, অর্থাৎ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০১২ সালে ৬২ হাজার ১৯ জনের স্ক্রিনিং করে ১৪ হাজার ৮ শত ৩৬ জনের (২৩.৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ১১ হাজার ৯ শত ৫৬ জনের (১৯.৩ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়। ২০২২ সালে ৬৮ হাজার ৭ শত জনের স্ক্রিনিং করে ১৩ হাজার ২৮ জনের (১৯ শতাংশ) সিবিই পজেটিভ পাওয়া যায় এবং ৮ হাজার ২ শত ৬৮ জনের (১২ শতাংশ) ভায়া পজেটিভ পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, এই কর্মসূচীর অধীনে স্ক্রিনিং করার জন্য ইতোমধ্যে ৭ লক্ষ মহিলাকে প্রি-রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের কৌশল সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম, পপুলেশন কভারেজ বৃদ্ধি এবং স্ক্রীনিংকৃত পজিটিভ মহিলাদের চিকিৎসা, জনবল ও যন্ত্রপাতির সক্ষমতা বৃদ্ধি, রেডিওথেরাপি, অনকোসার্জারী, হসপিটাল প্যাথলজি সেবা শক্তিশালী করা প্রয়োজন।