দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যার জন্য ছয়জনের সঙ্গে চুক্তি করে স্বামী। ওদের সঙ্গে মিলে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে। স্ত্রীকে হত্যার পর চুক্তির টাকা দিতে না পারায় খুন হন স্বামীও। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের ঘটনার তেরো বছর পর রায়ে ছয় আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আজ আদালত।
সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রকিবউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, রায় ঘোষণাকালে আদালতে তিন আসামী উপস্থিত ছিলেন।
দন্ডপ্রাপ্ত ছয়জন হলেন- আরিফ, সুমন-১, সুমন-২, জামাল, লোকমান, শফিক। তাদের মধ্যে সুমন-১, লোকমান ও শফিক পলাতক রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দেবই গ্রামের একই ডোবা থেকে কয়েল কারখানার শ্রমিক খাদিজা ও তার স্বামী রহমানের লাশ উদ্ধার হয়। জোড়া খুনের এই মামলার তদন্তে পুলিশ হত্যার জন্য চুক্তি ও গণধর্ষণের বিষয়টি উদঘাটন করে ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করে। ১২ সাক্ষ্য ও সংশ্লিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ছয়জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে আদালত মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রকিবউদ্দিন আহমেদ এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ আলী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কয়েল কারখানায় কাজ করতেন খাদিজা। ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট সকাল ৭টায় বাসা থেকে কাজের জন্য বের হয়। পরে রাত ৮টায় বান্ধবী আমেনার সঙ্গে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে রাত ৯টায় গাউছিয়া জুটমিলের সামনে পৌঁছানোর পর খাদিজা তার স্বামী রহমানের সঙ্গে ট্যাক্সিতে উঠে চলে যায়। এরপর ১৬ আগস্ট স্থানীয় লোকজন রূপগঞ্জের দেবই গ্রামের বোচারবাগের রমিজউদ্দিনের ডোবার পানিতে কচুরিপানা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় খাদিজা ও রহমানের মরদেহ দেখতে পায়।
এই ঘটনায় খাদিজার পিতা আনোয়ার হোসেন রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তে চাঞ্চল্যকর বিষয় উঠে আসে। তদন্ত শেষে আদালতে ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণ সরকার। তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, দেড় বছরের সাংসারিক জীবনে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় রহমান ও খাদিজার। এরই জেরে রহমান স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছয়জনের সাথে চুক্তিও করে সে। ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট রহমান ও দন্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি মিলে খাদিজাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করে। পরে চুক্তির ১০ হাজার টাকা দিতে না পারায় ছয় আসামি হত্যা করে রহমানকেও। দুইজনের মরদেহই ডোবার পানিতে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয় তারা।