পোর্ট এলিজাবেথে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিন শেষ বিকেলে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখলেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও পেসার খালেদ আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ উইকেট শিকার করেছেন তাইজুল ও খালেদ। এই ৫ উইকেটের বিনিময়ে ৯০ ওভারে ২৭৮ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাইজুল ৩টি ও খালেদ ২টি উইকেট নেন।
পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জ পার্কে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগার। দু’টি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। ওপেনার সাদমান ইসলামের জায়গায় তামিম ইকবাল ও ইনজুরিতে পড়া পেসার তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
খালেদের সাথে ইনিংসের শুরুতে বোলিং করে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৮৮৯ সালের পর এই ভেন্যুতে কোন স্পিনার নতুন বলে বোলিং করলেন।
তৃতীয় ওভারেই উইকেট শিকারের বড় সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার সারেল এরইউর বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করেন বাংলাদেশের বোলার খালেদ। তা নাকচ করে দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। রিভিউ নিতে চেয়েছিলেন খালেদ। তবে সতীর্থদের সঙ্গে আলাপ সাড়তে গিয়ে রিভিউর নির্ধারিত ১৫ সেকেন্ড পার করে ফেলেন অধিনায়ক মোমিনুল। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, আউট ছিলেন এরইউ।
৪ রানে জীবন পেয়ে অধিনায়ক ডিন এলগারের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন এরউই । তবে ১১তম ওভারে সেই খালেদের বলেই আউট হন এরইউ। উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন এরইউ। ৪০ বলে ২৪ রান করেন তিনি।
এরইউর আউটে উইকেটে আসেন কিগান পিটারসেন। তাকে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুড়ান এলগার। ৬৬ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম ও টানা তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান এলগার। এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ২৮ ওভারে ১ উইকেটে ১০৭ রান।
অধিনায়ক ডিন এলগার ৮০ বলে ৫৯ রান এবং ২৪ রানে অপরাজিত আছেন তিন নম্বরে নামা কিগান পিটারসেন।
বিরতি থেকে ফেরার পর পঞ্চম ওভারে এলগারকে বিদায় দেন এই সিরিজে প্রথম খেলতে নামা বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তাইজুলের করা ৩৩তম ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এলগার। ৮৯ বলে ১০টি চারে ৭০ রান করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এলগার। দ্বিতীয় উইকেটে পিটারসেনের সাথে ১২৫ বলে ৮১ রান যোগ করেন এলগার।
অধিনায়ককে হারানোর পরও রানের চাকা ঘুড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। এবাদতের করা ৩৪তম ওভারের শেষ তিন বলে তিন বাউন্ডারিতে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন পিটারসেন।
পিটারসেনের হাফ-সেঞ্চুরির পর ৩৯তম ওভার শেষে বৃষ্টিতে ২৪ মিনিট খেলা বন্ধ ছিলো। পরে খেলা শুরু হলে বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছেন পিটারসেন ও তেম্বা বাভুমা। তবে ৫১তম ওভারে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান তাইজুল।
এবারও সেই লেগ বিফোর নাটক, তবে রিভিউতে সাফল্য বাংলাদেশের। পিটারসেনের বিপক্ষে লেগ বিফোর আউটের আবেদন করেন তাইজুল। কিন্তু আবেদন নাকচ করে দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। এবার আর সময়ক্ষেপন না করে রিভিউ নিয়ে নেন অধিনায়ক মোমিনুল। রিভিউতে সাফল্য পেতেও অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্বান্তে লেগ বিফোর আউট হন পিটারসেন। ৯টি চারে ১২৪ বলে ৬৪ রান করেন পিটারসেন।
প্রথম দুই জুটির মত তৃতীয় উইকেটের জুটিও হাফ-সেঞ্চুরির রান করে। বাভুমা-পিটারসেন জুটি ১০৬ বলে ৫১ রান যোগ করে।
দলীয় ১৮৪ রানে পিটারসেনের বিদায়ের পর ক্রিজে বাভুমার সঙ্গী হন রায়ান রিকেলটন। এই জুটিও বাংলাদেশের বোলারদের সামনে নিজেদের মেলে ধরেন। মিরাজকে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান বাভুমা।
বাভুমা-রিকেলটনরা যখন উইকেট ধরে খেলায় ব্যস্ত, তখন উইকেট শিকারের নেশায় ছিলো বাংলাদেশের বোলাররা। দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার হাফ-সেঞ্চুরিয়ানকে ফেরানো তাইজুলের হাত ধরে আবারও ব্রেক থ্রুর অপেক্ষায় ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু দিনের চতুর্থ সাফল্যের দেখা মিলছিলো না।
অবশেষে সেই তাইজুলই, বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন। তবে আবারও আলোচনায় রিভিউ। তাইজুলের ডেলিভারি রির্ভাস সুইপ করেন রিকেলটন। ব্যাটে বল না লাগলেও, তা রিকেলটনের কব্জি ও গ্লাভস স্পর্শ করে। এতে ক্যাচ আউটের আবেদন করে। এতেও আম্পায়ার আগ্রহী না হলে, রিভিউ নেন টাইগার নেতা মোমিনুল। তাতেই সাফল্য মিলে যায়। রিভিউতে রিকেলটনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গেন তাইজুল। ৮২ বলে ৪২ রান করেন রিকেলটন। প্রথম তিনটির মত এই জুটিও হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেয়। ১৮৬ বলে ৮৩ রানে আসে জুটিতে।
তাইজুলের ব্রেক-থ্রুর পর উইকেটে সেট থাকা ব্যাটার বাভুমাকে শিকার করেন খালেদ। ইনিংসের দ্বিতীয় নতুন বল নেয়ার ১১ বল পরই উইকেট পায় বাংলাদেশ। খালেদের বলে স্লিপে বাভুমার দারুন এক ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের ৮৫তম ওভারে দলীয় ২৭১ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭টি চারে ১৬২ বলে ৬৭ রান করেন বাভুমা।
দিনের শেষ বেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার দুই সেট ব্যাটারকে বিদায়ের পর আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠে বাংলাদেশ। কিন্তু দিনের শেষ ৩৩ বলে কোন বিপদ হতে দেননি দক্ষিন আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কাইল ভেরিনি ও ওয়াইন মুল্ডার। অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষে করেন তারা। ভেরিনি ১০ ও মুল্ডার শুন্য রানে অপরাজিত ছিলেন।
বাংলাদেশের তাইজুল ৩২ ওভারে ৭৭ রানে ৩টি ও খালেদ ২০ ওভারে ৫৯ রানে ২টি উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড (টস- দক্ষিণ আফ্রিকা) :
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস :
এলগার ক লিটন ব তাইজুল ৭০
এরইউ ক লিটন ব খালেদ ২৪
পিটারসেন এলবিডব্লু ব তাইজুল ৬৪
বাভুমা এলবিডব্লু ব খালেদ ৬৭
রিকেলটন ক ইয়াসির ব তাইজুল ৪২
ভেরেনি অপরাজিত ১০
মুল্ডার অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (ও-১) ১
মোট (৫ উইকেট, ৯০ ওভার) ২৭৮
উইকেট পতন : ১/৫২ (এরইউ), ২/১৩৩ (এলগার), ৩/১৮৪ (পিটারসেন), ৪/২৬৭ (রিকেলটন), ৫/২৭১ (বাভুমা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
খালেদ : ২০-৪-৫৯-২,
মিরাজ : ১৯-২-৫৮-০,
এবাদত : ১৬-২-৭৫-০ (ও-১),
তাইজুল : ৩২-৭-৭৭-৩,
শান্ত : ৩-০-৯-০।