দ্বিতীয় দল হিসেবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
আজ টুর্নামেন্টে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে কুমিল্লা ৪ উইকেটে হারিয়েছে সিলেট সানরাইজার্সকে। কুমিল্লার আগে প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল।
প্রথম ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৯ রান করে সিলেট সানরাইজার্স। জবাবে মাহমুদুল হাসান জয়ের হাফ-সেঞ্চুরি ও শেষ দিকে সুনীল নারাইনের অসাধারন ব্যাটিংয়ে ১৯ দশমিক ৫ ওভারে জয় নিশ্চিত হয় কুমিল্লার।
৮ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে কুমিল্লা। ৯ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে প্লে-অফের আশা আগেই শেষ হয় যাওয়া সিলেট। ৯ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে বরিশাল।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসরের ২৬তম ম্যাচে টস জিতে প্রথমে সিলেটকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানান কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা দারুনভাবে কাজে লাগান সিলেটের দুই ওপেনার ইনগ্রাম ও বিজয় । পাওয়ার প্লেতে ৫২ রান পায় এ জুটি।
কুমিল্লার বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের করা পঞ্চম ওভারে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ রান নেন আফ্রিকার ইনগ্রাম।
পাওয়ার প্লে শেষেও রানের গতি ধরে রেখেছিলেন ইনগ্রাম ও বিজয় । ১০ ওভার শেষে স্কোর বোর্ডে সিলেটের রান দাঁড়ায় ৯২। ১১তম ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৪৬তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ইনগ্রাম। এজন্য ৩৫ বল খেলেন তিনি। ঐ ওভারেই এবারের আসরে তৃতীয় শতরানের জুটিতে পা রাখেন এনামুল-বিজয়।
ইনগ্রামের মত হাফ-সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন বিজয়। কিন্তু ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তার বিদায় নিশ্চিত করেন কুমিল্লার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। মিড অফে ফাফ ডু প্লেসিসকে ক্যাচ দিয়ে ৪৬ রানে থামেন এনামুল। ৩৩ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন তিনি।
দলীয় ১০৫ রানে এনামুল আউটের পর ক্রিজে আসেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেন্ডন সিমন্স। ১টি করে চার-ছক্কায় ইনিংস শুরু করেও তারভীরের শিকার হয়ে ১৬ রানে থামতে হয় তাকে
এরপর অধিনায়ক রবি বোপারকে ১ রানেই বোল্ড করেন কুমিল্লার ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড় স্পিনার সুনীল নারাইন।
১৬ ও ১৭তম ওভারে সিমন্স-বোপারা বিদায়ে নিলে, ডেথ ওভারে দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব বর্তায় ইনগ্রামের কাঁধে। ১৯তম ওভারে ১৩ রান তুলেন ইনগ্রাম ও আলাউদ্দিন বাবু।
মুুস্তাফিজের শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন ইনগ্রাম। তবে পরের ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগে নাহিদুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ইনগ্রাম। আগের ম্যাচে ৯০ রান করা ইনগ্রাম আজ করেন ৮৯। তার ৬৩ বলের ইনিংসে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিলো।
ইনগ্রামের আউটের পর বাকী চার বল থেকে ৩ রান পায় সিলেট। শেষ বলে আলাউদ্দিনকেও শিকার করেন মুস্তাফিজ। এতে ৫ উইকেটে ১৬৯ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট। কুমিল্লার মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন।
১৭০ রানের জবাবে শুরুতেই বিপদে পড়ে কুমিল্লা। ২২ রানের মধ্যে ওপেনার লিটন দাস ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু-প্লেসিসকে হারায় তারা। ডান-হাতি পেসার একেএস স্বাধীনের শিকার হয়ে ৭ রানে ফিরেন লিটন। তিন নম্বরে নামা ডু-প্লেসিসকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন সিলেটের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। ডু-প্লেসিস ২ রান করেন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ডু-প্লেসিস।
এরপর উইকেটে সেট হতে সতর্কতার সাথে খেলেন আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও ইংল্যান্ডের মঈন আলি। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে, ১০ ওভার শেষে দলের স্কোর ৬৮ রানে নিয়ে যান জয় ও মঈন। ১১তম ওভারে সোহাগের করা বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান তুলেন মঈন।
মঈনের সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত রান তুলেন জয়ও। মুক্তার আলির ১৩তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা হাকান জয়। পরের ওভারে জয়-মঈনের জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গেন সিলেটের অধিনায়ক বোপারা। শর্ট থার্ডম্যানে স্বাধীনকে ক্যাচ দেন মঈন। আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৬ রান করেন মঈন। তৃতীয় উইকেটে ৬৬ বলে ৮২ রান তুলেন জয় ও মঈন।
মঈন না পারলেও, ৪২তম বলে বাউন্ডারি দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন জয়।
বোপারার ১৬তম ওভারে ২০ রান পায় কুমিল্লা। সেখানে অধিনায়ক ইমরুলের ২টি ছয় ও জয়ের ১টি চার ছিলো। তবে পরের ওভারে নাজমুলের দ্বিতীয় শিকার হন ইমরুল। ৮ বলে ১৬ রান করেন কুমিল্লার অধিনায়ক।
শেষ ৩ ওভারে কুমিল্লার জিততে ২৯ রান দরকার পড়ে। ১৮তম ওভারে শেষ দুই বলে কুমিল্লার জোড়া উইকেট তুলে ম্যাচে উত্তেজনা তৈরি করেন সিলেটের পেসার আলাউদ্দিন বাবু। উইকেটে সেট থাকা জয়কে ৬৫ রানে ও নতুন ব্যাটার আরিফুলকে শিকার করেন তিনি। ৫০ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৫ রান করেন জয়।
আলাউদ্দিনের জোড়া ধাক্কার পর শেষ ২ ওভারে ২২ রানের প্রয়োজন পড়ে কুমিল্লার। স্বাধীনের করা ১৯তম ওভারটি ছিলো ব্যয়বহুল। ১৯ রান দেন তিনি। কুমিল্লার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার নারাইন ১টি ছয় ও ২টি চার মারেন। সাথে ৩টি ওয়াইড বলও করেন স্বাধীন।
শেষ ওভারে ৩ রানের দরকারে আলাউদ্দিনের প্রথম চার বলে ২ রান পায় কুমিল্লা। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে দলকে জয় এনে দেন আবু হায়দার রনি। ১২ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন নারাইন। আবু হায়দার ৬ রানে অপরাজিত থাকেন। সিলেটের নাজমুল-আলাউদ্দিন ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
সিলেট সানরাইজার্স : ১৬৯/৫, ২০ ওভার (ইনগ্রাম ৮৯, এনামুল ৪৬, মুস্তাফিজ ৩/২৩)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৭৩/৬, ১৯.৫ ওভার (জয় ৬৫, মঈন ৪৬, আলাউদ্দিন ২/২৪)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মাহমুদুল হাসান জয় (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)।