সৌম্য সরকারের ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে-অফের পথে ভালোভাবেই টিকে আছে খুলনা টাইগার্স। ব্যাট-বল উভয় বিভাগেই দারুন নৈপুন্য দেখিয়েছেন সৌম্য।
আজ টুর্নামেন্টের ২২তম এবং দিনের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে খুলনা ১৫ রানে হারিয়েছে সিলেটকে। সিলেটের হারে প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত হলো সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালের।
এই জয়ে ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে উঠলো খুলনা। ৭ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ছয় দলের মধ্যে টেবিলের তলানিতেই থাকলো সিলেট। ৮ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে বরিশাল।
টসের বিপরীতে প্রথমে ব্যাট করে সৌম্যর অপরাজিত ৮২ ও মুশফিকের হার না মানা ৬২’র সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮২ রানের বড় সংগ্রহ পায় খুলনা টাইগার্স। জবাবে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান করে সিলেট।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খুলনার বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন সিলেটের নতুন অধিনায়ক ইংল্যান্ডের রবি বোপারা।
খুলনার হয়ে ওপেনার হিসেবে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই রান আউট হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার। আর পরের বলেই পিঞ্চ হিটার হিসেবে নামা মাহেদি হাসানকে বিদায় দেন সিলেটের স্পিনার সোহাগ গাজী। প্রথম স্লিপে মাহেদির ক্যাচ নেন অলক কাপালি।
দুই বলে দুই উইকেট পতনের পর উইকেট গিয়ে দু’টি চার আদায় করে নেন ইয়াসির আলি। ফলে প্রথম ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৯ রান পায় খুলনা। পাওয়ার প্লের সুবিধা ভালোভাবে কাজে লাগান আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ও ইয়াসির। ৪৬ রান তুলে তারা। তবে ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে ইয়াসিরকে বোল্ড করেন একেএস স্বাধীন।
পাওয়ার প্লে শেষ হবার পর, পরের তিন ওভারে কোন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি আদায় করতে পারেননি সৌম্য ও অধিনায়ক মুশফিক। দশম ওভারে দু’টি বাউন্ডারিতে খড়া কাটে। রানের চাকা ঘুড়িয়ে ১৩তম ওভারে দলের স্কোর ১শতে নেন সৌম্য ও মুশফিক। ১৫তম ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য। ৪৩ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি।
বোপারার করা ১৬তম ওভারে ১টি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মারেন মুশফিক। ১৮তম ওভারে ৩২ বল খেলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন মুশফিক।
চার-ছক্কা ফুলঝুড়ি না ফুটাতে পারলেও, শেষ চার ওভারে ৪৪ রান যোগ করেন সৌম্য-মুশফিক। ডেথ ওভারে সৌম্য ৩টি ছয় ও মুশফিক ২টি চার মারেন। চতুর্থ উইকেটে সৌম্য-মুশফিকের ৮৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৩১ রানের জুটিতে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৮২ রানের সংগ্রহ পায় খুলনা। সিলেটের অধিনায়ক বোপারা ইনিংসের নবম ওভারে বল বিকৃতি করলে, তাৎক্ষনিক জরিমানা হিসেবে ৫ রান পেনাল্টি করা হয়। এতে ৫ রান খুলনার স্কোরবোর্ডে যোগ হয়।
৬২ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ৮২ রান করেন সৌম্য। ৩৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৬২ রান করেন মুশফিক। সিলেটের সোহাগ-স্বাধীন ১টি করে উইকেট নেন। একাদশে থাকলেও বল হাতে আক্রমনে দেখা যায়নি আগের ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নেয়া স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুকে।
১৮৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে, পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগান সিলেটের দুই ওপেনার লেন্ডন সিমন্স ও এনামুল হক। ৬ ওভারে ৪১ রান তোলেন তারা। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে সিমন্সকে শিকার করেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদ। টেস্ট মেজাজে খেলা সিমন্স ১৭ বলে ১০ রান করেন।
তিন নম্বরে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ইনগ্রামকে নিয়ে দলের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন এনামুল। সপ্তম ওভারে মাহেদিকে পরপর দু’টি ছক্কা মারেন এনামুল। এরপর ৩৯ বলে সিলেট কোন বাউন্ডারি আদায় করতে পারেনি। ১১তম ওভারে সেট ব্যাটসম্যান এনামুলকে বিদায় করেন শ্রীলংকার থিসারা পেরেরা। ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৭ রান করেন এনামুল।
এনামুলের বিদায়ে উইকেটে এসে টেস্ট মেজাজে খেলতে শুরু করেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৮ বল খেলে ২ রান নিয়ে সৌম্যর প্রথম শিকার হন মিঠুন। পরের ওভারে বোপারকে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান পেরেরা। এতে ৭৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সিলেট। এই অবস্থায় আস্কিং রেট ১৪ ছুঁই-ছুঁই।
তখনই খুলনার বোলারদের উপর চড়াও হন ইনগ্রাম ও মোসাদ্দেক। কামরুল ইসলামের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারে ১৭ রান নেন তারা। পেরেরার পরের ওভারে উঠে ১১ রান। তবে খালেদের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁেচ যাওয়া ইনগ্রাম পরের বলে মিড উইকেটে জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজার তালুবন্দি হন। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ বলে ৩৭ রান করেন ইনগ্রাম। মোসাদ্দেকের সাথে ৩০ বলে ৫৮ রানের জুটি ছিলো ইনগ্রামের।
ইনগ্রাম যখন ফিরেন, তখন ১৬ বলে ৫২ রানের প্রয়োজন ছিলো সিলেটের। শেষ ওভারে ৩৬ রানের দরকারে প্রথম তিন বলেই ছক্কা মারেন আলাউদ্দিন বাবু। তবে পরের তিন বলে ২ রান দিয়ে খুলনার জয় নিশ্চিত করেন কামরুল। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৭ রান করে ম্যাচ হারে সিলেট।
২২ বলে ৭টি চারে অপরাজিত ৩৯ রান করেন মোসাদ্দেক। আর শেষদিকে ঝড় তুলে ৭ বলে অপরাজিত ২৫ রান করেন আলাউদ্দিন। তার ইনিংসে ১টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিলো। খুলনার পেরেরা-সৌম্য ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন সৌম্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
খুলনা টাইগার্স : ১৮২/৩, ২০ ওভার (সৌম্য ৮২*, মুশফিক ৬২*, সোহাগ ১/২৭)।
সিলেট সানরাইজার্স : ১৬৭/৬, ২০ ওভার (এনামুল ৪৭, মোসাদ্দেক ৩৯*, পেরেরা ২/২৩)।
ফল : খুলনা টাইগার্স ১৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সৌম্য সরকার (খুলনা টাইগার্স)।