আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়।
তিনি আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব)-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইনে আছে শর্তযুক্ত, শর্তমুক্ত। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দরখাস্ত শর্তযুক্ত শর্তে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। অনেকে বলছেন, ওই দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগের কথা। বারবার বলে আসছি, একটা নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত, আইন অনুসারে পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।
আনিসুল হক বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন- সেটি কিন্তু আওয়ামী লীগ করে নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালে তারা অন্তত দশবার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছে মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সব কিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা পাঁচ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেকটা মামলায় পরে খালেদা জিয়ার সাত বছর সাজা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন সাজা ভোগ করছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি বিশেষ শর্তে সাজা স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেন।
আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবার আগে এখন ইনকোয়ারির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেলে যাচ্ছে। যদি অভিযোগ মামলা করার মতো হয় তাহলে মামলা আদালতে যাবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এখন কিন্তু কোনো সাংবাদিককে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আগে যাচাই করা হয়। এই আইন সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, এই আইনের অপব্যবহার যাতে বন্ধ হয়, সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছি।
মন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে আমি খবরের কাগজ পড়ি। তখন আমার বয়স আট। তখন ক্রাইম রিপোর্টিং আলাদাভাবে ছিল না। আগে আইনজীবীদের মধ্যেও এমনটি ছিল। কিন্তু এখন আলাদা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছে সাংবাদিক ও আইনজীবীরা।
আনিসুল হক বলেন, অপরাধের তথ্য এখন অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানার আগেই দিচ্ছে সাংবাদিকরা। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সবার। সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যে সুসম্পর্ক- তা খুবই গভীর হয়েছে। আমাদের দেশে যত টকশো হয়, এত টকশো অন্য দেশের গণমাধ্যমে হয় না। বাক-স্বাধীনতা নাই, তা বলা যাবে না। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাও হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। গত দুইবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। দলগুলো নামগুলো দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ১০টি নাম সার্চ কমিটি সুপারিশ করতে পারবে, সেই দশটি নাম থেকে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নিয়োগ দেবেন। এটা অ্যাক্টের ওপরে হয়েছে, এটা আইন না। এটার ওপরে দুটি নির্বাচন হয়েছে। তবে আমিও মনে করি, আইন হওয়া উচিত। সুজনের প্রতিনিধি গিয়েছিল। আমি পরিষ্কার বলেছি, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন হওয়া দরকার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সব সংসদ সদস্যকে সংসদে পাচ্ছিলাম না। সংসদ সদস্যদের পাশ কাটিয়ে কোনো অর্ডিন্যান্স করব না।
তিনি আরও বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে ডায়ালগ শুরু করেছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরমধ্যে যেহেতু সংসদ আইন করতে পারবে না, আগে যে পদ্ধতিতে হয়েছে সেই নিয়মে হতে পারে, অথবা ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি রয়েছে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশন ১০ জনকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নাম পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে আমরা নিজস্ব চ্যানেলে খবর নিই, খবর দিতাম। এখন সাংবাদিকরা অনেক কিছু জানছে, আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে আগে চলে আসছে। যে কারণে সাংবাদিকতাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের সুবিধার জন্য র্যাব মিডিয়া সেন্টার কারওয়ান বাজারে আনা হয়েছে।