শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু এ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড পরিদর্শন এবং দর্শনা সুগার মিলে ২০২১-২২ মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন।
আজ আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আলী আসগার টগর, বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো: আরিফুর রহমান অপু, মন্ত্রণালয় ও কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং স্থানীয় আখ চাষীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে তিনি কেরুজ ট্রেনিং কমপেøেক্সর সম্মেলন কক্ষে আখ চাষী এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন সুগার মিলের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, একটি জাতিকে উন্নত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে শিল্প-কারখানার যে বিকল্প নেই তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেয়া উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশ বিনির্মাণে শিল্প মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর চিনির চাহিদা কম-বেশি প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন এবং এর মধ্যে কর্পোরেশনের ছাউনির নিচে থাকা চিনিকলগুলো থেকে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার মেট্রিক টনের মত। বাকি প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টনের মত বিদেশ থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করা হয়।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বেশিরভাগ চিনিকলের যন্ত্রপাতি বেশ পুরনো। কিছুর মেয়াদ শেষ হয়েছে আরো ৩০-৪০ বছর আগেই। এখানে প্রায় প্রাচীন পদ্ধতিতে আখ সংগ্রহ, বাছাই, মাড়াই করা হয়। সময় এবং জনবল লাগে বেশি, সে তুলনায় উৎপাদন কম। দেশে আখ উৎপাদন এবং মাড়াই বা চিনিকল-দুই জায়গাতেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। যদি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ে, তাহলে আখ চাষ লাভজনক হবে। বিএসআরআই উদ্ভাবিত উন্নত জাতের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে আখ চাষ লাভজনক হবে।
চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোর দিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, চিনির পাশাপাশি চিনিকলগুলো থেকে বাণিজ্যিকভাবে অ্যালকোহল, ভিনেগার, জৈব দ্রাবক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ রাসায়নিক সামগ্রী সহ-উৎপাদ হিসেবে পাওয়া সম্ভব। আখ মাড়াইয়ের পর সেখানের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি করা যায় জৈব সার। অবকাঠামোগুলোকে আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালী করে চিনিকলের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে হবে। কম খরচে উচ্চফলনশীল জাতের আখ চাষ, উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা এবং পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। পাশাপাশি চিনিকলগুলোতে দক্ষ প্রশাসন ও অর্থনৈতিক কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের চিনিকলের সুদিন ফিরে আসবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, কেরু এ্যান্ড কোম্পানি নিয়ে সরকার কিছু করতে চাচ্ছে। চিনির পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত অন্যান্য পণ্যের চাহিদা আছে। কেরুর সক্ষমতা দ্বিগুণ করার জন্য এখানে দ্বিতীয় একটি ইউনিট করার চিন্তা করা হচ্ছে ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে শ্রমিক ইউনিয়ন নের্তৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করতে হলে উচ্চফলনশীল জাতের আখ উদ্ভাবনের চেষ্টা করতে হবে। আখের সাথে সাথী ফসলও করতে হবে। প্রয়োজনে রিফাইন সুগার কিনে বন্ধ মিল চালু করা হবে।