অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) কর্মকর্তাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যারা ভ্যাট আদায় করছেন তাদের বলব, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে ভ্যাট আদায় করুন। জনগণকে আপনাদের কার্যক্রমে একীভূত করুন। তাহলে তারা নিজেরা কর পরিশোধে এগিয়ে আসবেন।’
শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে আইডিবি ভবনে ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনাদের একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, যারা কর পরিশোধ করছেন, তাদের উপর কোনভাবে চাপ তৈরি না করে, নতুন করদাতাদের ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদেরকে তিনি বলেন, ‘যারা সম্মাননা পেলেন, আপনাদের দায়িত্ব হলো ভ্যাট প্রদানে অন্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করা।’ তিনি বলেন, করের টাকা দিয়ে সরকার অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ করছে। পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সামাজিক কর্মসূচি চালু রেখে তাদেরকে অর্থনীতির মূল ¯্রােতধারায় নিয়ে আসছে।
বিগত ১২ বছরে দেশের যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তাকে রূপকথার গল্পের সাথে তুৃলনা করে মুস্তফা কামাল বলেন, ২০০৫-৬ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আয় ছিল ৪৪ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, সেটা ২০২০-২১ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। তবে তিনি কর কর্মকর্তাদের বলেন, আমাদের আরও এগুতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারি ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা তুলে দেন অর্থমন্ত্রী।
উৎপাদন খাত থেকে এরিস্টোফার্মা লিমিটেড, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড ও মেসার্স মায়া বিড়ি ফ্যাক্টরি; ব্যবসা শ্রেণিতে এস এম মোটরস, এমকো বাজাজ ইন্টারন্যাশনাল ও ইউনিয়ন মোটরস লিমিটেড এবং সেবা ক্যাটাগরিতে তিন সেরা ভ্যাটদাতা হিসেবে ইডটকো বাংলাদেশ কোং লিমিটেড, গ্রে অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড ও রবার্ট বস (বাংলাদেশ) লিমিটেডকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, যারা নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করছে, তাদের হয়রানি না করে উৎসাহিত করা জরুরি। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে খাতাপত্র জব্দ করা, হয়রানি করা কিংবা আতংক পরিস্থিতির যে অভিযোগ পাওয়া যায়, তা স্থিতিশীল ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সহায়ক নয় । তবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাজস্ব ফাঁকি দেয়, আমরা তাদের পক্ষে নই ।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এবং রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেলা চেম্বার ও খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনসমূহের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা প্রয়োজন। ভ্যাটের জন্য ঢাকায় এলটিইউ (বৃহৎ করদাতা) কমিশনারেট বর্তমানে ১টির স্থলে ২টি এবং চট্টগ্রামে একটি এলটিইউ কমিশনারেট স্থাপন করা হলে রাজস্ব আহরণে সহায়ক হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কর ছাড় সব সময় নেতিবাচক নয়। এটা কর্মসংস্থান বাড়ায়। তবে আমাদের কর ছাড় কমাতে হবে এবং সিলেক্টিভ হতে হবে। রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।