গতবছর আফ্রিকার দেশসমূহের আন্তঃবাণিজ্য ১৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের হলেও বাংলাদেশ তার মোট রপ্তানির মাত্র ১ দশমিক শুন্য ২ শতাংশ সেখানে রপ্তানি করেছে। যদিও সেখানে বাংলাদেশের ঔষধ, টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, পাটপণ্য ও পাদুকা সহ অন্যান্য পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এমতাবস্থায় উন্নয়শীল দেশে (এলডিসি) উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আফ্রিকার বাজারে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি সেখানে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের পঞ্চম দিন শনিবার ‘বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকরা এ কথা বলেন।
ওয়েবিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আহসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ সুযোগ গ্রহণ করতে দেশের উদ্যোক্তাদের আরও উদ্যোমী হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঔষধ, টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটজাতপণ্য, চামড়া ও পাদুকা পণ্যেও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আফ্রিকা অঞ্চলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকারের পক্ষ হতে নীতি সহায়তা সহ সকল ধরনের সহযোগিতার আশ^াস দেন। তিনি বলেন, আফ্রিকা মহাদেশে প্রচুর জমি রয়েছে, যেখানে আমাদের উদ্যোক্তারা তৈরি পোষাকসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান জানান, সারা বিশে^র সাথে আফ্রিকার বাণিজ্যের পরিমান ৮৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৈশি^ক বাণিজ্যেও ৩ শতাংশ এবং গতবছর আফ্রিকার দেশগুলোর আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ ১৩৩ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, আফ্রিকার বাণিজ্য প্রধানত ‘আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (আগোয়া)’ এবং ‘কমন মার্কেট ফর ইষ্টার্ন অ্যান্ড সাউদার্ন আফ্রিকা (কমেসা)’-এর মাধ্যমে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত হয়ে থাকে। তিনি জানান, আফ্রিকায় বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে ইপিবি ৫টি বাণিজ্য মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর আফ্রিকার দেশগুলোর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের পর আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও বেশি হারে বাংলাদেশী পণ্য আফ্রিকাতে রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণের উপর জোরারোপ করেন ইপিবি প্রধান।
ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, তবে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র ১ দশমিক শুন্য ২ শতাংশ আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি হয়ে থাকে। তিনি বলেন, আফ্রিকার দেশসমূহ হতে বাংলাদেশ প্রধানত তুলা আমদানি করে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের টেক্সটাইল, কৃষি, ফিশারীজ, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ খাতে আফ্রিকার বিনিয়োগ প্রায় ৩০৬ মিলিয়ন ডলার। আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুকরণ,বাংলাদেশে আফ্রিকার দেশসূহের দূতাবাস স্থাপন,এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আফ্রিকায় অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহ সেখানকার বিভিন্ন চেম্বার, এসোসিয়েশন এবং উদ্যোক্তাদের সাথে প্রতিনিয়িত যোগাযোগ রাখছেন এবং আশা প্রকাশ করেন ভবিষ্যতে আফ্রিকাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও সম্প্রসারণ হবে।
ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসেন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. আব্দুস সামাদ আল আজাদও অংশ নেন।