বাংলাদেশে ভারতের মিউটেন্ট ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো: শারফুদ্দিন আহমেদ।
আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘কোভিড-১৯ আপডেট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন,ভারতের ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে,এই ভ্যারিয়েন্টে একজন থেকে ৪ শত জন পর্যন্ত মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। দেশে এটি ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় ভ্যাকসিন নেয়া, প্রয়োজনে দু’টি মাস্ক পড়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ সকল ধরণের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে হতাশার কারণ নাই। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর যে দেশ থেকেই অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করা হবে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট নির্ধারণে জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে, এন্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সাফল্যের হার শতকরা ৯৮ শতাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোল্যারিংগোলজি-হেড এন্ড নেক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম,প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, এ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম আখতারুজ্জামান, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উলাহ মুন্সী। সেমিনারে ‘মিউটেশনস এন্ড নিউ ভ্যারিয়েন্টস অফ নভেল করোনা ভাইরাস’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা।
‘চ্যালেঞ্জেস এন্ড আউটকামস অফ অ্যাভেইল্যাবল ভ্যাকসিনস এগেইনস্ট নিউ ভ্যারিয়েন্টস অফ কোভিড-১৯’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম।
‘প্রেজেন্টেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট ডিফিকালটিস অফ নিউয়ার ভ্যারিয়েন্টস’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজাশিস চক্রবর্তী।
সেমিনারে মডারেটর এর দায়িত্ব পালন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ।
অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন নিলেও অন্যের সুরক্ষার জন্য মাস্ক পড়তে হবে। ৯৯ ভাগ নয়, সকলের জন্য শত ভাগ মাস্ক পড়া অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন,করোনা ভাইরাস যা শুধু ফুসফুস নয়, হার্ট, কিডনী, লিভার থেকে শুরু করে শরীরে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ভাইরাসটি প্রতিরোধ জরুরি। এজন্য মাস্ক পড়া, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন দেশেই কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে এবং দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
সেমিনারে জানানো হয়,ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশনের কারণে বিভিন্ন ধরণের ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ, ভোগান্তি, জটিলতা ও মৃত্যুহারের বিবেচনায় অনেক শক্তিশালী হিসেবে লক্ষ্য করা যায়। ভ্যারিয়েন্টগুলো বিভিন্ন মাত্রার শক্তিশালী হলেও ভ্যাকসিন অবশ্যই নিতে হবে। কারণ কোনো ভ্যারিয়েন্টই ভ্যাকসিন থেকে সম্পূর্ণ প্রতিরোধী নয়। ভ্যাকসিন নিলে শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় তার মাধ্যমে সব ধরণের ভ্যারিয়েন্ট থেকে কমবেশি রক্ষা পাওয়া যাবে।