বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মিজু আহমেদ আর নেই
নিজস্ব প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মিজু আহমেদ আর নেই। আজ সোমবার ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ট্রেনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি…. রাজিউন)।
না ফেরার দেশে চলে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের শক্তিমান খল অভিনেতা মিজু আহমেদ। আজ সোমবার সন্ধ্যায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। আজ সোমবার রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন।
শক্তিশালী খল অভিনেতা মিজু আহমেদের প্রকৃত নাম মিজানুর রহমান। স্ত্রী পারভীন আহমেদ, দুই মেয়ে কেয়া ও মৌ এবং একমাত্র ছোট সন্তান হারসাতকে নিয়েই ছিল তার সুখি পরিবার। অবসরে ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করতেন তিনি। নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এই অভিনেতা। সারাক্ষন সবাইকে হাঁসি ঠাট্টায় মাতিয়ে রাখতেন মিজু আহমেদ ।
মিজু আহমেদের আকস্মিক মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গন সহ প্রায় সবখানেই নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া । ফেসবুকের দেয়াল জুড়ে তারকাসহ হাজারো ভক্তের শোকের স্ট্যাটাস আর স্মৃতিচারন ।
মিজু আহমেদ একজন প্রযোজক হিসেবেও ঢালিউড পাড়ায় পরিচিত। মূলত, আহমেদ তার খলনায়ক চরিত্রের সুবাদে বাংলা চলচ্চিত্রে সুপরিচিত। কয়েক বছর পরে তিনি ঢালিউড চলচ্চিত্র শিল্পে অন্যতম সেরা একজন খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়াও তিনি তার নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ফ্রেন্ডস মুভিজ এর ব্যানারে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন।জানা গেছে, ট্রেনেই মিজু আহমেদ হার্ট অ্যাটাক হয় তার। এসময় ট্রেনে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার পালস পরীক্ষা করে তার হার্টবিট পাননি।আজ ট্রেন যোগে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে রাত ৮টা ২০ মিনিটের র দিকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনের নিকট ট্রেনেই হৃদযোগে আক্রান্ত হন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিচালক শাহীন ও অভিনেতা অমিত হাসান। চিত্রনির্মাতা শাহীন সুমন জানান, ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সেখান থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৮ টা ৩৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।অমিত হাসান বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হন মিজু আহমেদ। ট্রেন তেজগাঁও স্টেশন যাওয়ার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাঁকে বিমানবন্দর স্টেশনে নামানোর পর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’অমিত হাসান বলেন, আমরা বিমানবন্দর থানায় কথা বলেছি। সেখান থেকে আমাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি আর ওমর সানি ভাই গাড়িতে যাচ্ছি।অভিনেতা মিশা সওদাগরের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমিও শুনেছি মিজু ভাই আর নেই। আমি কুর্মিটোলা হাসপাতালে যাচ্ছি।’ স্ত্রী পারভীন আহমেদ, দুই মেয়ে কেয়া ও মৌ এবং ছেলে হারশাতকে নিয়ে ছিল তার পরিবার।
চলচ্চিত্র পরিচালক ইলিয়াস ভূইয়া জানান, গতমাসে শুরু হওয়া মানুষ কেন অমানুষ ছবির শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে ঢাকার কমলাপুর থেকে সপ্নপুরী যাচ্ছিলেন মিজু আহমেদ। আহমেদ ইলিয়াস ভূইয়া নিজেই ওই ছবি পরিচালনা করছেন। ট্রেনে পরিচালক কাজী হায়াৎ ও অভিনেত্রী রেহানা জলিও ছিলেন। তাদের উধৃতি দিয়ে ভুইয়া জানান, আগে থেকে মোটেও অসুস্থ্য ছিলেননা। হাঁসি খুশি মেজাজেই উঠেছিলেন ট্রেনে । রাত ৮টার পরে ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছলে আকস্মিক মিজু আহমেদ বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। পরে ট্রেন থামার পর কাছের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মিজু আহমেদ মারা গেছেন।
একনজরে মিজু আহমেদ
মিজু আহমেদের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায়।তার জন্ম নাম হচ্ছে মিজানুর রহমান। শৈশবকাল থেকে তিনি থিয়েটারের প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন। পরবর্তী তিনি কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি নাট্যদলের সাথে অন্তর্ভূক্ত হন। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে থেকে তিনি বিএসসি বিভাগ নিয়ে উত্তীর্ণ হন।১৯৭৮ সালে কৃষ্ণা ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নাম লেখান মিজু আহমেদ। এ পর্যন্ত ৮০০ এর অধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে তৃষ্ণা, চাকর, ত্যাগ, বশিরা, হাঙর নদী গ্রেনেড, কুলি, লাঠি, কষ্ট, ইতিহাস ও ক্রাইম রোড। তৃষ্ণা ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।মিজু আহমেদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি, বাংলাদেশ হল মালিক ও প্রদর্শন সমিতিসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।