আতিয়া মহলের পাশের ভবন থেকে তিন শিশু ও তিন নারীসহ সাতজনকে উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদক :মোঃ নুর উদ্দিন :-
সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলের পাশের ভবন থেকে তিন শিশু ও তিন নারীসহ সাতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার আতিয়া মহলে চতুর্থ দিনের মতো অভিযান চলছে। রবিবার বিকাল থেকে বেশ কিছু সময় চুপচাপ থাকলেও মধ্যরাতে ওই বাড়ি থেকে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। পরে সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।রবিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনা সদর দফতরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানান, আতিয়া মহলে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। এছাড়া ওই আস্তানায় এক বা একাধিক জঙ্গি এখনো জীবিত রয়েছে। তাই অভিযান অব্যাহত রয়েছে।ঘরের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক ফিট করে রেখেছে জঙ্গিরা- উল্লেখ করে ফখরুল আহসান বলেন, তারা ঘরে বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে, তাই অভিযান চালানো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেজন্য সময় বেশি লেগেছে। তবে আমাদের প্রাথমিক যে টার্গেট ছিল, ভেতরে থাকা সাধারণ লোকদের সরিয়ে আনা, তাতে কমান্ডোরা সফল হয়েছে।উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একই ব্যক্তির মালিকানাধীন পাঁচ তলা ও চার তলা বাড়ি দুটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলে পুলিশ। তাদের সাথে প্রথমে সোয়াট, পরে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা যোগ দেন। শনিবার সকালে শুরু হয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।সেদিন ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে আতিয়া মহলে আটকা পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়। তবে নিচতলার ফ্ল্যাটে থাকা জঙ্গিদের ধরা সম্ভব হয়নি। এই অভিযানের মধ্যেই সন্ধ্যায় ভবনটির কাছেই দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হন। র্যাব ও পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন অতন্ত ৩০ জন।
বিস্ফোরণে হতাহতের পর শনিবার মধ্যরাত থেকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের বেসামরিক যান চালাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই এলাকায় জনসাধারণের চলাচলও নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে বলে সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান।যে ফ্ল্যাটটিতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, ওই বাড়ির মালিক উস্তার আলীর ভাষ্য, তিন মাস আগে কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগম নামে এক দম্পতি ফ্ল্যাটটিতে ওঠেন। শুক্রবার অভিযানের সময় ওই বাসা থেকে এক নারী ও এক পুরুষের সাড়াও পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, যে দুজন নিহত হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন, তাদের দুজনই পুরুষ। ভেতরে কোনো নারী আছেন কি না, সে বিষয়ে কমান্ডোরা নিশ্চিত হতে পারেননি।এদিকে শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান শুরুর আগে ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে গেলেও যারা এখনও রয়ে গেছেন, তাদের সময় কাটছে উদ্বেগ-আতঙ্কের মধ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারছেন না। জরুরি কাজে বাইরে যাওয়া এবং বাড়ি ফিরতেও সমস্যা হচ্ছে।সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা অপারেশন ‘টোয়ালাইট’ নামে ওই অভিযান চালালেও বাইরে তাদের সহায়তায় আছে সোয়াট। এছাড়া রয়েছে পুলিশ, র্যাব, এসবি, ডিবি, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।