সিনিয়র সহঃসম্পাদক আলহাজ্ব হুসাইন আলী রাজন:-
ঐতিহাসিক নিদর্শন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রাচীন বিথঙ্গল আখড়া এখন পর্যটকদের আকর্ষণ করছে নতুন রূপে। আখড়ার প্রাচীন জরাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করায় এর জৌলুস বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আখড়ায় আসছেন। বর্ষাকালে জেলা সদর থেকে ইঞ্জিনের নৌকায় দেড় ঘণ্টায় বিথঙ্গল পৌঁছার সহজ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শুকনো মৌসুমে আখড়ায় যাওয়া অনেকটা কষ্টকর।
আখড়ার বিশাল ইমারতগুলোর নির্মাণশৈলী সহজেই দর্শকদের আকৃষ্ট করে। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য এ অঞ্চলের অন্যতম তীর্থ ক্ষেত্র এই আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ গোস্বামী হবিগঞ্জের রিচি পরগণার অধিবাসী ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান সফর শেষে বিথঙ্গল এসে এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলা ১০৫৯ সালে রামকৃষ্ণ গোস্বামী মারা যান। আখড়ায় রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থলের উপর একটি সুদৃশ্য মঠ রয়েছে। মঠের সামনে একটি নাটমন্দির, পূর্বপাশে একটি ভাণ্ডার ঘর এবং দক্ষিণে একটি ভোগ মন্দির রয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি পুরনো ইমারত আছে।সরকারি অর্থানুকূল্যে সংস্কারের যে কাজ করা হয়েছে তা অপ্রতুল। বিশেষ করে সংস্কারের সময় আখড়ার প্রাচীন সৌন্দর্য রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে আখড়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আখড়ায় দর্শনীয় বস্তুর মধ্যে রয়েছে ২৫ মণ ওজনের শ্বেতপাথরের চৌকি, পিতলের সিংহাসন, রথ, রৌপ্যনির্মিত পাখি, মুকুট ইত্যাদি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এলাকাবাসী প্রতিদিন রোগবালাই হতে পরিত্রাণের জন্য আখড়ায় এসে মোহন্তের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে যান।
আখড়ার বর্তমান মোহন্ত সুকুমার দাস জানান, আখড়ার নিজস্ব ৪০ একর জমির উৎপাদিত ফসল ও ভক্তদের দানে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হয়। উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে বিথঙ্গলের উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী প্রাচীন এই আখড়া পরিদর্শন করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন। আখড়ার মালিকানাধীন অনেক ভূ-সম্পত্তি ইতোমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। দেশের প্রাচীনতম এ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।