দেশেই একই মানের স্মার্টকার্ড তৈরি করার চিন্তা :ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম
নিজস্ব প্রতিনিধি:-
নাগরিকদের হাতে তুলে দেওয়া উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ‘স্মার্টকার্ড’ এখন আনা হচ্ছে ফ্রান্স থেকে। কিন্তু অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশেই সেটি তৈরি করার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানা গেছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে তৈরি স্মার্টকার্ডের একটি নমুনা কপিও সংগ্রহ করেছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি দেশেই একই মানের স্মার্টকার্ড তৈরি করা যায় কি না। এরই মধ্যে বুয়েট এবং বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সঙ্গে কথা হয়েছে। নমুনা কপি সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।সবকিছু ঠিক থাকলে নমুনা কপি এখন কমিশন বৈঠকে পাঠানো হবে। সেখানের সিদ্ধান্ত পেলেই কাজে হাত দেওয়া হবে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, স্মার্টকার্ড তৈরির মেশিন বিদেশ থেকেই আনতে হবে আর কার্ড বাংলাদেশেই তৈরি করা হবে। নতুন ভোটাররা দেশের তৈরি স্মার্টকার্ড পেতে পারেন বলেও জানান তিনি।জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা প্রথমে সিটি করপোরেশন, তারপর জেলা সদর, এরপর উপজেলা পর্যায়ে এভাবে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেব। এমন দিন কখনোই আসবে না যে নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া হবে না।’যাঁরা বিভিন্ন কারণে বিতরণ করা স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারেননি, তাঁদের উদ্দেশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের কার্ড প্রিন্ট হয়েছে কিন্তু ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে হয়তো নিতে পারেননি, তাঁরা ওই সব এলাকায় বিতরণ কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর নিজ নিজ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে এটি সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ছাড়া যাঁদের কার্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা তাঁদের নাম, ফোন নম্বর লিখে রাখছি এবং কী কারণে তাঁদের কার্ডটি প্রিন্ট হলো না সেটি চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারপর প্রিন্ট দিয়ে পরবর্তী সময়ে তাঁদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে, কোথা থেকে কার্ডটি সংগ্রহ করবেন।
যা থাকবে স্মার্টকার্ডে
পুরোনো জাতীয় পরিচয়পত্রের ৩১টি তথ্যের পাশাপাশি স্মার্টকার্ডে আরো ১৬টি তথ্যও সংরক্ষিত থাকবে। এগুলো হলো ব্যক্তির নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, পেশা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মতারিখ, রক্তের গ্রুপ, জন্মনিবন্ধন সনদ, লিঙ্গ, জন্মস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দৃশ্যমান শনাক্তকরণ চিহ্ন, ধর্ম। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট নম্বর, আয়কর সনদ নম্বর, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর, মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, স্বামী বা স্ত্রীর নাম ও পরিচয়পত্র নম্বর থাকলে এবং মা-বাবা, স্বামী বা স্ত্রী মৃত হলে সে-সংক্রান্ত তথ্য, অসামর্থ্য বা প্রতিবন্ধী হলে সেই তথ্যও উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
স্মার্টকার্ডের ব্যবহার
আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি, পাসপোর্ট প্রাপ্তি ও নবায়ন, চাকরির জন্য আবেদন, স্থাবর সম্পত্তি কেনা-বেচা, ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণপ্রাপ্তি, সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, সরকারি ভর্তুকি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর প্রাপ্তি ও নবায়ন, সাহায্য, সহায়তা প্রাপ্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমানবন্দরে ই-গেইট-এর মাধ্যমে আগমন ও বহির্গমন সুবিধা, শেয়ার আবেদন ও বিও অ্যাকাউন্ট খোলা, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ গ্রহণ, মোবাইল ও টেলিফোন সংযোগ গ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের ই-টিকেটিং, সিকিউরড ওয়েব লগ ইন, ই-ফরম পূরণে নাগরিকের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোজনের কাজে ১০ ডিজিটের এই স্মার্টকার্ড ব্যবহার করা যাবে।
স্মার্টকার্ড হেল্পডেস্ক
স্মার্টকার্ড সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানাতে একটি হেল্প ডেস্ক খুলেছে এআইডি উইং। যে কোনো ফোন থেকে ১০৫ নম্বরে কল করে নাগরিকদের তথ্য জানাবেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের কর্মকর্তারা।
২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ১৮ মাসের মধ্যে ৯০ মিলিয়ন (৯ কোটি) স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেওয়ার জন্য ফ্রান্সের ‘অবার্থার টেকনোলজিস’ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জুনে নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা ছিল ইসির। কিন্তু সময়মতো না দিতে পারার আশঙ্কায় ইসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যয় না বাড়ানোর শর্তে এ প্রকল্পে আরো ১৮ মাস সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেয়।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১০ কোটি ১৭ লাখ ভোটারের মধ্যে নয় কোটির হাতে লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে। প্রথম থেকে এটি সংশোধন বা হারানো সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হলেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে কমিশন।