নিজস্ব প্রতিনিধি: – সকাল ৭টায় গ্যাস যায়। আসে রাত ৯টায়। গ্যাস এলেও চুলা পিট পিট করে জ্বলে। এভাবে রান্না করা যায় না। পুরো শীতের সময়টা এমন যাচ্ছে। এমনও দিন গেছে দিনে ২ ঘণ্টাও গ্যাস থাকে না। ফ্রিজের খাবার ঠাণ্ডা অবস্থায়ই খেতে হচ্ছে। গ্যাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে রান্না করতে হচ্ছে বলা যায়।
এভাবেই বলছিলেন মিরপুর সেনপাড়া পর্বতার আম্বিয়া গার্ডেন বাসিন্দা গৃহিনী বন্যা। এই গৃহিনীর মতো রাজধানীর মিরপুরে বহু পরিবারে চুলা জ্বলছে না। ফলে, অনেকেই মাটির চুলা ও সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এই তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর ২, ১০ নম্বরসহ কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১৪ নম্বরের বিআরপি কলোনি এবং আগারগাঁও তালতলায় তীব্র গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অনেক স্থানে সকালেই গ্যাস উধাও, রাতে এলেও থাকে অল্প সময়।
মিরপুর ১৪ নম্বরের বিআরপি কলোনিতে গত দুই মাস ধরে সারাদিন মিলে ২ ঘণ্টাও গ্যাস থাকে না। গ্যাস সংকটের কারণে কলোনির বাসিন্দারা সিলিন্ডার ও মাটির চুলায় রান্না করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুরের এসব এলাকায় গ্যাস আসতে কোথাও দুপুর গড়িয়ে বিকেল, কোথাও সন্ধ্যা বা রাত।
জানা গেছে, শীতকালে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হয়। এছাড়া ঠাণ্ডায় পাইপলাইনে গ্যাসের উপজাত জমে যায়, এতে বাধা পায় গ্যাস সরবরাহ। তবে এই ঘাটতি আর সরবরাহে বাধার সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধ সংযোগ। শীতে গ্যাসের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে কনডেনসেট (গ্যাসের উপজাত) জমে। সঞ্চালন লাইন পরিষ্কার করা গেলেও আমাদের সরবরাহ লাইন পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। এর ফলে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ঘাটতি মোকাবেলায় নতুন করে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে না।
গ্যাসের উৎপাদন না বাড়লেও আমরা নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় সংযোগ দিয়েছি। বাড়তি সংযোগগুলোতে গ্যাস সরবরাহ সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ সংযোগের কারণে সরবরাহ লাইনে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় বলে জানান তিনি।
মিরপুর ১০ নম্বর কাজীপাড়ায় ও মিরপুর ১৪ নম্বরের বিআরপি ৩ নম্বর কলোনিতে পুরো শীতকাল জুড়ে গ্যাস সংকট চলছে। বিশেষ করে সকাল ৭টার পর গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। দুপুরে অনেক চুলা জ্বলে না।
বিআরপি ৩ নম্বর কলোনির বাসিন্দা নাছরিন আক্তার বলেন, তিন মাস ধরে গ্যাসের সংকটে আছি। সকাল ৭ টার পর চুলা জ্বলে না। দুপুরের রান্না করতে হয় ভোর থেকে। সারাদিন গ্যাস থাকে না। রাত ১০টার পর গ্যাসের চাপ বাড়লেও রাতেই চলে যায়। তবে কয়েকদিন ধরে এমন সমস্যা হচ্ছে, ভোর বা রাতে রান্না করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কেরোসিনের চুলা কিনে এনেছি।
মেট্রোরেলে কাজ চলায় মিরপুর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে ফলে কোথাও কোথাও গ্যাস সরবারাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে মিরপুর ১১, সাড়ে ১২ ও পল্লবী এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। সকাল ৭টার পর থেকে চুলায় গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। ৯টার পর আর চুলা জ্বলে না। সন্ধ্যায় আবার গ্যাসের চাপ একটু একটু করে বাড়তে থাকে। ফলে একপ্রকার যুদ্ধ করে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে।
গ্যাস সংকটে পড়ে অতিষ্ঠ পল্লবী এলাকার বাসিন্দা বাবলী আক্তার। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় কষ্ট করে একবার রান্না হচ্ছে। সে খাবার ফ্রিজে রেখে দিচ্ছি। গরম না করে বাচ্চাদের খাওয়াতে হচ্ছে। এতে বাচ্চাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আগারগাঁও তালতলায়ও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। সাজ্জাদুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, পুরো শীতে এমন গ্যাসের সংকট দেখলাম। কয়েকদিন ধরে এত তীব্র সমস্যা যে রান্না চড়ানো যাচ্ছে না। এ জন্য বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।