১০ জনের স্কটল্যান্ডকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে মিউনিখে শুক্রবার ইউরো মিশন শুরু করেছে স্বাগতিক জার্মানী। দুর্দান্ত এই শুরু জার্মানীর চতুর্থ ইউরোপীয়ান শিরোপা জয়ের স্বপ্ন আরো দৃঢ় করেছে।
ফ্লোরিয়ান রিটজ ১০ মিনিটে গোলের সূচনা করেন। অল্প সময়ের মধ্যে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে ব্যবধান দ্বিগুন করেন জামাল মুসিয়ালা।
জার্মানীর উড়ন্ত এই সূচনার পর মুসিয়ালা বলেছেন, ‘এর থেকে ভাল শুরু আর হতে পারেনা। আমরা এখানে নিজেদের পরিচিত পরিবেশ ঘরের মাঠে খেলছি, আর সে কারনেই এই ধরনের একটা শুরুর প্রয়োজন ছিল।’
স্কটল্যান্ডের জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষার একটি রাত মোটেই ভালভাবে কাটাতে দেয়নি জার্মানরা। ইকে গুনডোগানকে দুই পায়ে পিছন থেকে চ্যালেঞ্জের কারনে সরাসরি লাল কার্ড দেখে প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে মাঠ ত্যাগ করেন স্কটল্যান্ডের রায়ান পোরটিয়াস। এর ফলে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে কেই হাভার্টজ দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন। বদলী হিসেবে নেমে নিকলান ফুলক্রুগ দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে শক্তিশালি শটে স্কোরশিটে নাম লেখান। ৮৭ মিনিটে জার্মান খেলোয়াড় এন্টোনিও রুডিগারের আত্মঘাতি গোলে স্কটল্যান্ড একটু হলেও স্বস্তি ফিরে পায়। ইনজুরি টাইমে আরেক বদলী খেলোয়াড় এমরে কান জার্মানীর হয়ে পঞ্চম গোলটি করেছেন।
এই ধরনের বিধ্বস্ত একটি শুরুর চিন্তাও করেনি স্কটিশরা। তবে তাদেরকে এখন গ্রুপের দুই দুই দল সুইজারল্যান্ড ও হাঙ্গেরির বিপক্ষে ফিরে আসার দ্রুত পরিকল্পনা কষতে হবে। স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক এন্ডি রবার্টসন ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আজকের দিনটা অত্যন্ত হতাশার। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে আমরা স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলতে নেমেছি এবং এটা প্রথম ম্যাচ। সব মিলিয়ে পুরো পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন হয়ে উঠেছিল।’
টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা বিশেষ করে ২০১৮ ও ২০২২ বিশ^কাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ে জার্মানীর হতাশার চিত্র কাটানোই এই টুর্নামেন্টের মূল লক্ষ্য। কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যান থেকে শুরু থেকে অনেকেই একথাই ইউরো শুরুর আগে বারবার বলে আসছেন। সেপ্টেম্বরে নিয়োগের পর নাগলসম্যানের অধীনে অনেকটাই বদলে যাওয়া উজ্জীবিত জার্মানরা যে এবার মাঠের লড়াইয়ে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা প্রথম ম্যাচেই প্রমান হয়েছে। ২০০৬ সালের বিশ^কাপের পর ঘরের মাঠে এটাই জার্মানদের প্রথম কোন বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনের উপলক্ষ।
অন্যদিকে স্কটিশ কোচ স্টিভ ক্লার্ক বলেছেন তার দল কাউকে ভয় পায়না। প্রায় দুই দশকেরও বেশী সময় পর টানা দ্বিতীয়বারের মত ইউরোতে খেলতে আসা স্কটল্যান্ড এবার অন্তত খালি হাতে ফিরতে চায়না। যদিও নিজেদের শেষ নয়টি ম্যাচে মাত্র একটি জয়কে সঙ্গী করে তারা মিউনিখে খেলতে এসেছে। গত সপ্তাহে ছোট দল জিব্রালটারের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় দলকে কতটা আত্মবিশ^াসী করেছে তা সময়ই বলে দিবে।
ম্যাচের শুরুতেই স্কটিশ গোলরক্ষক এ্যানগাস গুন অফসাইডে থাকা রিটজকে আটকাতে হিমশিম খেয়েছেন। যদিও দ্রুতই রিটজ গোলের দেখা পান। অভিজ্ঞ টনি ক্রুসে বাড়ানো বলে জসুয়া কিমিচের এ্যাসিস্টে রিটজ গোল এরিয়ার একেবারে কাছ থেকে গুনকে পরাস্ত করেন। এই টুর্নামেন্ট শেষে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন ক্রুস। তিনি এবং গুনডোগান মিলে কাল জার্মানীর মধ্যমাঠে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছেন। ১৯ মিনিটে হাভার্টজের পাস থেকে স্কটিশ রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে দারুন এক গোলে ব্যবধান দ্বিগুন করেন মুসিয়ালা। এর আগে অবশ্য মুসিয়ালাকে পিছন থেকে ফাউল করার অপরাধে রায়ান ক্রিস্টি ও কিয়েরান টিয়ারনি বিপক্ষে পেনাল্টির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু টাচলাইন মনিটরের সাথে আলোচনা করে রেফারি ক্লেমেন্ট টারপিন তা নাকচ করে দেন। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে পোরটিয়াস গুনডোগানকে বাজেভাবে চ্যালেঞ্জ করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগ করেন। ভিএআর রিভিউতে জার্মানীকে এই ঘটনায় পেনাল্টি উপহার দেয়া হয়। হাভার্টজ স্পট কিক থেকে গুনকে উল্টো দিকে পাঠিয়ে বল জালে জড়ান।
দ্বিতীয়ার্ধে স্কটল্যান্ড কিছুটা উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামে। কিন্তু কোনভাবেই জার্মানদের আটকাতে পারেনি। হাভার্টজের পরিবর্তে মাঠে নামা ফুলক্রুগের কোনাকুনি শটে ৬৮ মিনিটে ৪-০ ব্যবধানে লিড পায় স্বাগতিকরা।
ম্যাচ শেষে তিন মিনিট আগে স্কট ম্যাককেনার হেড ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই বল জড়ান রুডিগার। ইনজুরি টাইমে ২০ গজ দুর থেকে কানের কার্লিং শটে বড় ব্যবধানের জয় পায় জার্মানরা।