আইনের দৃষ্টিতে পলাতক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক দেয়া সব বক্তব্য ফেসবুক, ইউটিউব থেকে সরানোর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত রুলে সম্পূরক এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
তারেক রহমানের সাম্প্রতিক দেয়া সব বক্তব্য সরানোর নির্দেশ দেয়াকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের এজলাস কক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হইচই ও আদালত কক্ষে হট্রগোলের ঘটনা ঘটেছে। আজ হইচইয়’র মধ্যে একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আদেশ দেয়া হয়েছে, সংক্ষুব্ধ হলে আপনারা আপিল বিভাগে যেতে পারেন।’ এক পর্যায়ে বেঞ্চের দুই বিচারপতি এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে এ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
এজলাস কক্ষের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। এর আগে তারেক রহমানের সাম্প্রতিক দেয়া সব বক্তব্য ফেসবুক, ইউটিউব থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম, সানজিদা খানম ও এডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। সেই সঙ্গে বক্তব্য প্রচার বন্ধ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য কিংবা বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধে রুলসহ অন্তর্বতীকালীন আদেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়। তারেক রহমানের পাসপোর্টের মেয়াদ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) একটি প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুলও জারি করে আদালত।
আইনের দৃষ্টিতে পলাতক তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
আইনের দৃষ্টিতে পলাতক অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। সম্প্রতি রুল শুনানির উদ্যোগ নেয় রিট আবেদনকারীপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের শুরুতে বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। বিদেশে থাকায় তারেক রহমানের প্রতি নোটিশ জারি না হয়ে ২ আগস্ট তা ফেরত আসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। রিটে বিবাদী হিসেবে তারেক রহমানের উল্লেখিত ঠিকানা (বাড়ি নম্বর-৬, রুম নম্বর-৮৬) সঠিক নয় বলে ১০ আগস্ট শুনানিতে ওঠে।
আদালত রিট আবেদনকারীপক্ষকে রিটে উল্লেখিত ঠিকানা সংশোধনের জন্য আবেদন দিতে বলেন। সেদিনই হলফনামা আকারে বিবাদী হিসেবে তারেক রহমানের উল্লেখিত ঠিকানা সংশোধন এবং তার প্রতি নোটিশ জারির (রুল) জন্য আবেদন জমা দেন রিট আবেদনকারী। এরপর ১৩ আগস্ট হাইকোর্ট ওই রিট সূত্রে উল্লেখিত সংশোধিত ঠিকানায় (বাড়ি নং ৬, সড়ক-৮৬, গুলশান-২) বিবাদী তারেক রহমানের প্রতি বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে নোটিশ জারি করতে নির্দেশ দেন। এরপর তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউব থেকে সরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসি’র প্রতি নির্দেশ চেয়ে রিট আবেদনকারী সম্পূরক আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে আজ আদেশ দেন হাইকোর্ট।