চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলায় চমক সৃষ্টি করিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তিন যমজ ভাইবোন। উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তারা সবাই জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত তাসনিম আওন আজ রোববার দুপুরে তার কার্যালয়ে এই বিষয় সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এখন আর লেখাপড়ায় পিছিয়ে নেই। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেয়ার সফলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই উপজেলার একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারে তিনজন যমজ ভাই-বোন এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে এ ধরনের ফলাফল করেছে। তিনি বলেন, জিপিএ ৫ প্রাপ্তরা হলো- ভাই লাসার সৌরভ মুরমু এবং ২ বোন মেরি মৌমিতা মুরমু ও মারথা জেনিভিয়া মুরমু। এর মধ্যে লাসার সৌরভ মুরমু ইঞ্জিনিয়ার এবং দুইবোন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুনছে। তিনি জানান, ফলাফল প্রকাশের পর আজ রোববার সকালে তিনি তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদেরকে আজ উপজেলা পরিষদে নিয়ে এসে সম্মানিত করা হয়েছে। তারা মনের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করেন।
জেলার বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রায়াগপুর ইউনিয়নের চ-ীপুর গ্রামে বাবা জোহানেস মুর্মু ও মা সোহাগিনী হাসদারের তিন যমজ সন্তান এরা। বাবা উত্তরবঙ্গ শিশু উন্নয়ন প্রকল্প নামের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন এবং মা সোহাগিনী হাসদা একজন গৃহিনী।
আজ রোববার বিরামপুর উপজেলা পরিষদে কথা হয় যমজ ৩ যমজ শিক্ষার্থীর মাতা সোহাগিনী হাসদার সাথে। তিনি জানান, গত ২০০৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেলার পার্বতীপুরে একটি মিশন হাসপাতালে সকাল ১০টার দিকে লাসার সৌরভ মুরমু জন্ম নেয়। একই দিন দুপুর ১টার দিকে ২ বোন মারথা জেনিভা মুরমু ও মেরি মৌমিতা মুরমু জন্মগ্রহণ করে। ছোটবেলা থেকেই ওরা ৩ ভাই-বোন পড়াশোনায় অনেক মনোযোগী।
গত ২০১৭ সালে বিরামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এর পর বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে তারা ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। করোনাভাইরাসের কারণে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলেও এবার তারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনজনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার।
মা সোহাগিনী হাসদা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের সাফল্যে আমরা অনেক খুশি। মেয়ের স্বপ্ন রয়েছে বড় হয়ে ডাক্তার হওয়া আর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন পূরণের জন্য। এ জন্য সবার দোয়া প্রার্থনা করছি।
মেরি মৌমিতা মুরমু জানায়, আমরা তিন ভাই-বোন একসাথেই পড়াশোনা করি। আমরা এমন ফলাফলে অনেক খুশি। আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক হচ্ছেন আমাদের মা। বাবার উৎসাহে আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল। আমরা একটি প্রাইভেট পড়তাম। মা একটি পুরনো ফোন ব্যবহার করতেন। আমরা কোনো ফোন ব্যবহার করতাম না। আমদের ক্লাসে পাশাপাশি রোল ছিল। শিক্ষকরা আমাদের অনেক উৎসাহ দিতেন।
ওই গ্রামের ইউপি সদস্য আমজাাদ হোসেন জানান, আমাদের গ্রামের শিক্ষার্থীরা এমন সুন্দর ফল করে আমাদের গ্রামের সম্মান উজ্জ্বল করেছে। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা গ্রামবাসী চাই তারা সামনে আরো ভালো ফল করে তাদের স্বপ্ন পূরণ করুক।
জেলার বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন জানান, এবার এসএসসি পরীক্ষায় একই পরিবারের তিন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এতে আমাদের বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক বেশ খুশি। আমি দোয়া করি আগামীতে তাদের স্বপ্ন পূরণ হোক। সৃষ্টিকর্তার কাছে এই কামনাই করি।