কুষ্টিয়া জেলায় মাশরুম চাষ করে কলেজ ছাত্র সাগর সফলতার মুখ দেখেছেন। এখন বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মাশরুম চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থী মো. সাগর হোসেন । মাত্র ৩ বছরেই নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তার উৎপাদিত মাশরুম ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তিনি বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করছেন। খরচ বাদে ছাত্রজীবনেই বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করছেন। তিনি ছাড়াও তাঁর মাশরুম সেন্টারে আরও তিন থেকে পাঁচজন যুবক সারা বছর কাজ করে জীবিকা অর্জন করছেন। তরুণ এ উদ্যোক্তা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের কৃষক বাবু প্রামাণিকের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র।
এলাকাবাসী ও উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পড়াশোনার জন্য প্রায় ৩ বছর আগে সাগর হোসেন রাজবাড়ী শহরের একটি মেসে থাকতেন। সেখানে শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরি না পাওয়ার গল্প শুনে ভয় পেয়ে যান। চাকরি না করে কীভাবে স্বাবলম্বী হবেন? নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থান করবেন, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। একদিন একটি অনুষ্ঠানে মাশরুম চাষের প্রতিবেদন দেখেন। তা দেখে তিনি মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হন। যুব উন্নয়ন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর টিউশনি করে জমানো ৪৪ হাজার টাকা ও বাবার কাছ থেকে নিয়ে মোট ৫ লাখ টাকা দিয়ে ২০ শতাংশ জমির একটি টিনশেড ঘরে ২০২১ সালে মাশরুম চাষ শুরু করেন। তার এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য মাসিক বেতনে ৩ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন। তখন তিনি সম্মান শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র। প্রথম বছরেই সাগর হোসেন ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা দেখতে পান। পরের বছর মাশরুম চাষের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনের কাজও শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গ্রীষ্মকালে তিনি প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এছাড়া তার সেন্টারে শীতকালে প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি মাশরুম উৎপাদন করেন। যার বাজারমূল্য ২ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি মাশরুম উৎপাদন করতে খরচ হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর ২২০ টাকা কেজি দরে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। প্রতি মাসে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করেন।
সরেজমিনে জানা যায়, হোগলা গ্রামের একটি বাগানের মধ্যে টিনশেড দোচালা ঘরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাশরুম চাষ ও বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তা সাগর হোসেন বলেন, ‘প্রতি কেজি মাশরুম উৎপাদনে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা খরচ হয়। প্রতি কেজি ২২০ টাকা পাইকারি দরে ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করি। খরচ বাদে ছাত্রজীবনেই বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করছি। আমার মাশরুম সেন্টারে ৩ থেকে ৫ জন যুবক সারাবছর কাজ করেন। তাদের প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়।’
তরুণ এ উদ্যোক্তার দাবি, ‘মাশরুমকে কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি চাষিদের সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক। কৃষিখাতকে বাণিজ্যিক ও আধুনিক করার জন্য সরকারিভাবে জনবল ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’ মাশরুম সেন্টারের শ্রমিক তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছি। সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে আমিও একজন সফল উদ্যোক্তা হবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ‘মাশরুম উৎপাদনের স্থানটি পরিদর্শন করেছি। উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা প্রশাসন উদ্যোক্তা অ্যাপস ও ম্যাপসের ব্যবস্থা করেছে। প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কলেজ ছাত্র সাগররের এমন সফলতার গল্প শুনে আশপাশের এলাকার যুবকসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ সাগরের মাশরুম উৎপাদনের সেন্টারটি দেখতে আসেন। অনেকে মাশরুম চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।