শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দেশে শিল্প ও কর্মসংস্থান উপযোগি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কাজ চলছে, যেখানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্ব পাবে।
আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্প-শিক্ষা খাতের সমন্বয় : পরিবর্তশীল বৈশি^ক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
রাজধানীর মতিঝিল ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা।
ডা. দীপু মনি সময়োপযোগি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং বিশ^বিদ্যালয় সমূহে ‘একাডেমিক মাষ্টার প্ল্যান’ তৈরির আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, দেশে জনবল তৈরির লক্ষ্যে ইকো-সিস্টেম প্রণয়ন করতে হবে, যাতে করে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আলোচনা হচ্ছে, এখন সময় এসেছে সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এবং এজন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ জরুরী।
মন্ত্রী বলেন, সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সহ বেশকিছু হাই-টেক আইটি পার্ক নির্মাণ করছে, তবে কাঙ্খিত বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে স্থানীয়ভাবে দক্ষ মানবম্পদের কোন বিকল্প নেই এবং এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ ও বাস্তবয়ন জরুরী। তিনি বিশ^বিদ্যালয়সমূহে গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিতে এগুলোর বাণিজ্যিকীকরণে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আমাদের শিল্পখাত পরিচালনায় অনেক বিদেশী কর্মী কাজ করছে, যাদের বেতন-ভাতা হিসেবে বছরে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। মূলত এর জন্য আমাদের গুণগত শিক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতি ও দক্ষ জনশক্তির অভাব দায়ী। তাই দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এনএসডিএ নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ বলেন, শিক্ষার্থীদের উপযোগী ও দক্ষ করে তুলতে শিক্ষা ও শিল্প খাত এবং সরকারের সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘মানব সম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ হতে দক্ষতা উন্নয়নে পরিচালিত কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যেখান থেকে এ ধরণের কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা করা হবে।
ড. সায়েমা হক বিদিশা মূল প্রবন্ধে বলেন, ক্রমাগত পরিবর্তনশীল বৈশি^ক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি এবং এটাকে মোকাবেলায় শিক্ষা ও শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠীকে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে যুগোপযোগী করতে পারলে মানবসম্পদ খাতে বৈশি^ক চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। তিনি শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা কার্যক্রম সম্প্রসারণ, চাকুরীপ্রার্থীদের পাশাপাশি চাকুরীপ্রাপ্তির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের একটি ডাটাবেইজ প্রণয়নের আহ্বান জানান।
সেমিনারে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইবিএ’র পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আবাসিক প্রতিনিধি টমো পুটিনেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বডি’র সদস্য সাফকাত হায়দার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রমূখ আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচকবৃন্দ সকল স্তরে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ, নীতি সহায়তা ও বিদ্যমান আইনের সংষ্কার, গবেষণা ও উন্নয়নে খাতে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষা ও শিল্পখাতের মিথস্ক্রিয়া বাড়ানো, কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের উপর জোরারোপ করেন।