প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐতিহাসিক ৭ জুনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে এবং প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে কাজ করছি। গত প্রায় সাড়ে ১৪ বছরে আমরা দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে একথা বলেন। তিনি বলেন, ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬-দফা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৬ সালের এই দিনে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দিনটি অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬-দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ৬-দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬-দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ৬-দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ছয়-দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ছয়-দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ মানুষ রাজপথে নেমে আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ঘোষিত ৬-দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা আদায়ের লক্ষ্যে এ দিন আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, আবুল হোসেন, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। এই দিনে তিনি ঐতিহাসিক ৭ জুনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬-দফার প্রতি এ দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ছয়-দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অঙ্কুরিত হয় স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ। ছয়-দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয়-দফা ভিত্তিক ১১-দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ছয়-দফা কেবল বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস।
প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ ও আধুনিক-স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।