আগামীকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে গত বছর ৮ জানুয়ারি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজানসহ মোট চারজন বিচারপতিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। নিয়োগপ্রাপ্ত এই চার বিচারপতির মধ্যে বোরহান উদ্দিন, এম ইনায়েতুর রহিম ও কৃষ্ণা দেবনাথ পরদিন ৯ জানুয়ারি শপথ নেন। কিন্তু বিচারপতি নাজমুল আহসান করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় শপথ নিতে পারেননি।
১৯৮৬ সালের ১৮ মার্চ বরিশাল জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে আইন পেশায় কাজ শুরু করেন নাজমুল আহসান মিজান। পরে তিনি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিছুদিন তিনি ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ছিলেন। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান নাজমুল আহসান মিজান। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি বিচারপতি পদে স্থায়ী হন।
বিচারপতি হিসাবে তিনি অনেকগুলো ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করেন। বিশেষ করে ‘সকল সরকারি-স্বায়ত্বশাসিত-আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল অনুষ্ঠানের বক্তৃতা শেষে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান উচ্চারণ করে বক্তৃতা শেষ করা, ‘বিচার আদালতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো,’ মুক্তিযোদ্ধাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্বোধন, বিনা দোষে কারাগারে আটকে থাকা জাহালমকে মুক্তির রায়গুলো উল্লেখযোগ্য।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও বিচারপতি পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে আইনপেশার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজান বাম ধারার রাজনৈতিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বরগুনা ও স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগান এলাকায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজান ১৯৫৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ডাইয়া গ্রামে সম্ভান্ত্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আনোয়ার হোসেন তালুকদার প্রথম জীবনে স্কুল শিক্ষক ছিলেন। পরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কমকর্তা হিসাবে চাকরি করেন। মাতা জাহানারা বেগম।
তার শৈশব কাটে মেঘনা তীরের হিজলায়। পরে পিতার চাকরি সূত্রে কিছুদিন বসবাস করেন বরগুনার নলীতে। সেখানকার নলী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে এসএসসি পাস করেন। বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি এলএলবি পাস করে আইন পেশায় যোগ দেন।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান মিজানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিচারপতি নাজমুল আহসান মিজান স্মৃতি সংসদ-এর উদ্যোগে আগামীকাল সকাল ৯টায় বরিশাল নগরীর মুসলিম গোরস্তানে কবর জিয়ারত, দোয়া ও মোনাজাত এবং সন্ধ্যা ৬টায় বরিশাল অশ্বিনী কুমার হলে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট ভবন মিলনায়তনে আরেকটি স্মরণসভা ও একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও ঢাকা ও বরিশালে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।