এডি এনকেটিয়ার শেষ মিনিটের গোলে নাটকীয় ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত করেছে আর্সেনাল। রোববার প্রিমিয়ার লিগে দারুন এই জয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকা গানাররা পাঁচ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে গেছে। এদিকে আর্লিং হালান্ডের হ্যাটট্রিকে ম্যানচেস্টার সিটি ৩-০ ব্যবধানে উল্ফসকে উড়িয়ে দিয়েছে।
১৯ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত লিগ শিরোপা জয়ের পথে দারুন ছন্দে রয়েছে আর্সেনাল। এমিরেটস স্টেডিয়ামে অবশ্য মার্কোস রাশফোর্ডের শক্তিশালী স্ট্রাইকে ১৭ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। বিশ^কাপ বিরতির পর এটি রাশফোর্ডের নবম গোল। এনকেইটার শক্তিশালী হেডে সাত মিনিট পর সমতায় ফিরে আর্সেনাল। বুকায়ো সাকার দুর পাল্লার শট দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেয়। এবার সমতায় ফিরে রেড ডেভিলরা। লিসান্দ্রো মার্টিনেজ কর্ণার থেকে হেডের সাহায্যে দলকে সমতায় ফেরান। জুলাইয়ে ওল্ড ট্র্রাফোর্ডে আসার আগে আর্সেনালের টার্গেট ছিলেন মার্টিনেজ। ম্যাচে শেষ ভাগে এরিক টেন হাগের দল নিজেদের প্রতিরোধ করতেই বেশী ব্যস্ত ছিল। সাকার একটি শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। এরপর এনকেইটার শট দারুন দক্ষতায় রুখে দেন ডেভিড ডি গিয়া। আর্সেনাল চাপ সৃষ্টি করে খেলতে থাকে। মার্টিন ওডেগার্ডেও শটে এনকেইটার ফ্লিক আর্সেনালের জয় নিশ্চিত করে। অফসাইডের পতাকা উঠলেও থাকলেও ভিএআর পরীক্ষা করে আর্সেনালকে গোল উপহার দেয়।
ম্যাচ শেষে আর্সেনাল বস মিকেল আর্তেতা বলেছেন, ‘সবদিক থেকে আজ আমরা নিজেদের প্রমান করেছি, খেলোয়াড়রা দারুন পারফর্ম করেছে। এর থেকে ভাল ম্যাচ আর হতে পারেনা। ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলাটা কখনই সহজ নয়। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রমান করেছি, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের পারফরমেন্স ছিল অসাধারণ।’
১১ ম্যাচে প্রথম এই পরাজয়ে কার্যত এক যুগ পর ইউনাইটেডের শিরোপা জয়ের পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। চতুর্থ স্থানে থাকা ইউনাইটেড এই মুহূর্তে আর্সেনালের থেকে এক ম্যাচ বেশী খেলে ১১ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
টেন হাগ বলেছেন, ‘ম্যাচর শেষ মুহূর্তে এই ধরনের পরাজয় কখনই মেনে নেয়া যায়না। আর্সেনালের তিনটি গোলেই আমাদের ভুল ছিল। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা সাধারনত ভাল খেলি। কিন্তু আজ তা হয়নি।’
এদিকে প্রিমিয়ার লিগে ১৯তম ম্যাচে নরওয়েজিয়ান তরুণ হালান্ডের চতুর্থ হ্যাটট্রিকে সিটি উড়ন্ত জয় তুলে নিয়েছে। এই জয়ের মাধ্যমে সিটিজেনরা অল্প সময়ের জন্য হলেও আর্সেনালের থেকে পয়েন্টের ব্যবধান দুইয়ে নামিয়ে এনেছিল। কিন্তু আর্সেনাল ইউনাইটেডকে হারিয়ে আবারো লিড বাড়িয়ে নেয়। বৃহস্পতিবার টটেনহ্যামের বিরুদ্ধে ৪-২ গোলের পরাজয়ের পর সিটি বস পেপ গার্দিওলা খেলোয়াড়দের শিরোপা ধরে রাখার ক্ষুধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এর আগে সিটির শিরোপা জয়ের পথে হালান্ড অন্যতম বড় একটি পার্থক্য তৈরী করেছিলেন। স্বীকৃত একজন স্ট্রাইকার ছাড়া সিটি কিভাবে একটি শক্তিশালী দল হয়ে গড়ে উঠতে পারে তা হালান্ড আসার আগে তেমন একটা অনুভূত হয়নি। হালান্ড এসে দলের শক্তি নি:সন্দেহে বৃদ্ধি করেছেন। ২২ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের গোল করার অনুপাত সম্প্রতি কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু কাল আবারো তিনি সবদিক থেকেই নিজেকে প্রমান করেছেন। কেভিন ডি ব্রুইনার ক্রস থেকে ৪০ মিনিটে হেডের সাহায্যে গোল করে তিনি সিটিকে এগিয়ে দেন। এটি ছিল এবারের লিগে হালান্ডের ২৩তম গোল। সমান সংখ্যক গোল করে গত মৌসুমে মোহাম্মদ সালাহ ও সন হেয়াং মিন যৌথভাবে গোল্ডেন বুট জয় করেছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেনাল্টি স্পট থেকে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় হালান্ড ৩০তম গোল পূরণ করেন। রুবেন নেভেস ডি বক্সের মধ্যে ইকে গুনডোগানকে ফাউল করলে পেনাল্টি উপহার পায় সিটিজেনরা। চার মিনিট পর উল্ফস যেন হালান্ডকে হ্যাটট্রিক আদায় করতে সহায়তা করেন। গোলরক্ষক হোসে সা রিয়াদ মাহারেজকে বল পাস দেন। সেই বল থেকে মাহারেজ হালান্ডকে দিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন।
ম্যাচ শেষে গার্দিওলা বলেছেন, ‘হালান্ডের গোলের সংখ্যা সত্যিই অসাধারণ। তাকে দিয়ে খেলানো গেলে গোল আসবেই। আজ হালান্ডকে হ্যাটট্রিক পূরনে সতীর্থরা সহযোগিতা করেছে।’
জুলেন লোপেতেগুই কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর এটা লিগ ম্যাচে উল্ফসের দ্বিতীয় পরাজয়। গোল ব্যবধানে তারা রেলিগেশন জোন থেকে উপরে রয়েছে। এদিকে তলানির তিনটি দল থেকে এক পয়েন্ট উপরে রয়েছে সলিডস। ব্রেন্টফোর্ডের সাথে তারা গতকাল ঘরের মাঠে গোলশুন্য ড্র করেছে। নভেম্বরের পর থেকে তারা লিগে কোন ম্যাচে জয়ী হতে পারেনি।