মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে টাঙ্গাইলের ২ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
দুই আসামির মধ্যে একজন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করেন। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি পরে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন।
আজ ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থার কো-অর্ডিনেটর মো. সানাউল হক। এটি তদন্ত সংস্থার ৮৭তম প্রতিবেদন।
এ মামলায় আসামিরা হলেন, টাঙ্গাইল গোপালপুর উপজেলার বেড়াডাকুরী গ্রামের সবুর মাস্টারের ছেলে রাজাকার কমান্ডার কোহিনুর ওরফে মনিরুজ্জামান কোহিনুর (৭০)। অপরজন হলেন, গোপালপুর উপজেলার চাতুটিয়ার ছবর আলীর ছেলে রাজাকার আলমগীর ওরফে শা.আ.ম আলমগীর তালুকদার (৬৭)। এই দুই আসামি গত ৩ মার্চ থেকে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসামি কোহিনুর সম্পর্কে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া ও ভারতীয় তথা যৌথ বাহিনীর অভিযানে টাঙ্গাইল জেলা মুক্ত হয়। টাঙ্গাইল জেলা আলবদর কমান্ডার মনিরুজ্জামান কোহিনুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পশ্চাৎপসারণ করে ঢাকায় আশ্রয় নেন। তিনি ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত খাঁন সেনাদের সঙ্গে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। শিমলা চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। এবং পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে তিনি জাপান যান। ২০০২ সালে একটি মহলের যোগসাজশে কৌশলে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসেন।
এই দুই আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে-প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৮ জুন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুসলিম উদ্দিন মিয়া ওরফে মুসলিম মাস্টারকে রাজাকার কোহিনুর এবং তার সহযোগী রাজাকারেরা নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ গুম করে। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাজাকার কোহিনুর অন্যান্য রাজাকারসহ পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে মুসলিম মাস্টারের বাড়ি পুড়িয়ে দেন। একই দিন মুসলিম মাস্টারের শশুড়বাড়ি গিয়ে তার দুই মেয়েকে আর্মিদের হাতে তুলে দিতে বলেন। তাদের না পেয়ে ওই বাড়ি থেকে আবুল মনসুর মোহাম্মদ মাজহারুল হাসান তালুকদার নামে একজনকে তুলে নিয়ে যান। ১১ ডিসেম্বর তাকে কাদেরিয়া বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার কোহিনুর ও আলমগীর হানাদার বাহিনীর সহায়তায় শাহীন হাওলাদার, শহীদ দুদু ফকির ও শহীদ আমজাত ফকিরকে তাদের বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করেন এবং মোছা. সমলা বেগমকে উরুতে গুলি করে জখম করেন। এরপর তারা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে যাকে যেখানে পান গুলি করেন। মুক্তিযোদ্ধা মনে করে তারা ৪৫ নিরস্ত্র লোককে গুলি করে হত্যা করেন।