দেশে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) পদ্ধতির আওতায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ফার্স্ট ট্র্যাক কর্মসূচি অনুসরণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালফান এফ রহমান।
তিনি বলেছেন, পিপিপির আওতায় কেবলমাত্র ওইসব প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া যাবে, যদি ওই প্রস্তাবের সঙ্গে বিনিয়োগ উপযোগি নগদ অর্থ ও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার যাবতীয় প্রমাণাদি দাখিল করতে পারে। একইসঙ্গে তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের পূর্ণ সক্ষমতা থাকতে হবে।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে ‘২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জনে পিপিপির ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক, এফবিসিসিআই-এর পরিচালক প্রীতি চক্রবর্ত্তী ও পিপিপি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ হাসান হায়দার।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয়।
সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে পিপিপি পদ্ধতি সফল করা জরুরি। প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা গেলে সফল হওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করতে পারে, যার প্রকল্প শুরু করার মত প্রয়োজনীয় অর্থ রয়েছে এবং একইসাথে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারেরও সক্ষমতা থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যার প্রকল্প শুরু করার মত অর্থ নেই এবং ব্যাংক ঋণ পাবে না, সেই প্রকল্প ব্যর্থ হবে। পিপিপির টেন্ডারের ক্ষেত্রে ভাল আইন রয়েছে। সেখানে কিছু সংশোধনী এনে ফার্স্ট ট্র্যাক কর্মসূচি অনুসরণ করা যেতে পারে।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে পিপিপির সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে পিপিপি মডেল সফল হয়েছে। এর বড় উদাহরণ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন। এখন মোট বিদ্যুতের ৫৪ শতাংশ বেসরকারিখাতে উৎপাদন হচ্ছে।
তিনি বলেন, বেসরকারিখাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বর্তমান সরকার আইন সংশোধনীর পাশাপাশি এমন কিছু চুক্তি করেছিল, যার মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। তখন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে।এখন তার সুফল আমরা পাচ্ছি।
তিনি মনে করেন, পিপিপির আওতায় ফার্স্ট ট্র্যাক কর্মসূচি অনুসরণ করা গেলে অন্যান্যখাতেও সাফল্য পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেক সময় অবিশ্বাস বা আস্থাহীনতা কাজ করে। এর একটা বড় কারণ হলো অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ঠিকতম ফেরত দিতে পারছেন না। যে কারণে সরকার হয়ত মনে করে পিপিপিতে বিনিয়োগ করে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি-না কিংবা প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন হবে কি-না। তিনি মনে করেন, উদ্যোক্তাদের এই জায়গায় এগিয়ে আসতে হবে। খেলাপি ঋণ কমানো গেলে এই অবিশ্বাস আর থাকবে না।
অনুষ্ঠানের অন্য বক্তারা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে যেতে হলে যে ধরনের যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন, সেটা করতে হলে পিপিপি পদ্ধতি অনুসরণ করা অতীব জরুরি।